বিংশ শতাব্দীতেই সর্বপ্রথম কম্পিউটার ব্রেনকে কাজে লাগিয়ে রোবট তৈরি করার পরিকল্পনা করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা।বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামেবল রোবট হচ্ছে ইউনিমেট। ১৯৫৪ সালে পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল ও প্রোগ্রামেবল রোবট আবিষ্কার করেন জর্জ ডেভল। তিনি এর নাম দেন ইউনিমেট (Unimate)। ১৯৬১ সালে এটি জেনারেল মোটরস নামের একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। ইউনিমেটের কাজ ছিল লোহা লক্কড় ওঠানামা করানো এবং ভারী ভারী সব বস্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া। স্বয়ংক্রিয় রোবট আবিষ্কার মাধ্যমে আধুনিক রোবটের যাত্রা শুরু হয় ইউনিমেটের হাত ধরেই।
এর পর ১৯৬৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আবিষ্কার করেন শেকি রোবট। যেটি ছিলো সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় স্বায়ত্তশাসিত, কৃত্রিম বুদ্ধি ভিত্তিক রোবট।কোন টেবিলে বাধা পেলে কিভাবে সেই বাধাকে অতিক্রম করা যায় এবং রুমের চারপাশ দেখার মাধ্যমে বাধা বিপত্তি গুলো দেখে চলার মত সক্ষম করে গড়ে তোলা হয় এই রোবটকে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজিন্সকে কাজে লাগিয়ে গবেষকরা দিনদিন প্রযুক্তিতে বুদ্ধি ভিত্তিক মেশিন তেরি করে সাফল্য অর্জন করতে শুরু করেছেন এই শতাব্দির শেষের দিকে। কাজের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে তৈরি করে ফেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার যোগ্য রোবট।যে রোবটগুলো গাড়ী চালোনো থেকে শুরু করে উড়তেও সক্ষম।
রোবট জগতের সব চেয়ে অভাবনীয় সাফল্য হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজিন্সকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করে ফেলা হুবহু মানুষের মত কাজ করতে সক্ষম রোবট।মানুষের অবয়বে তৈরি করা এই রোবট তৈরি করা হয়েছে নিউরোসাইন্সের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ফলে্ এই রোবট তাদের নিজস্ব আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজিন্সকে কাজে লাগিয়ে মানুষের পালস বুঝতে সক্ষম হয়।
মানুষের অবয়েবের মত করে মানুষকে সাহয্য করার জন্য ‘অ্যাডভান্সড স্টেপ ইন ইনোভেটিভ মবিলিটি’-র সংক্ষিপ্ত রূপ আসিমো ছিলো বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট। ২০০০ সালে প্রথম আসিমোকে বাজারের নিয়ে আসে জাপানি কোম্পানি হোন্ডা। মানুষের মত দেখতে এই রোবটটির উচ্চতা ৪ ফিট ৩ ইঞ্চি এবং ওজন হচ্ছে ১১৯ পাউন্ড। প্রতি ঘন্টায় ৯ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতেও পারতো এই মানুষ সর্দশ রোবটটি।
প্রযুক্তিকে কাঝে লাগিয়ে বিশ্বের প্রথম অতি মানবীয় রোবট জিয়া জিয়া নির্মাণ করা হয় নারী রোবট। রোবটিক্স বিশ্বে এখন পর্যন্ত বানানো মানুষের আকৃতির রোবটের মধ্যে এটিই সবচেয়ে নিঁখুত বলে দাবি এর নির্মাতারা। এই রোবট দেখে বিশ্বাস হয় না যে, সুন্দরী নারী জিয়া জিয়া একটি রোবট। শুধু বাহ্যিক গঠনের কারণেই নয়, কথাবার্তা ও আচরণেও জিয়া জিয়াকে বাস্তবের সুন্দরী কোনো নারী বলেই মনে হবে।
বিশ্বে প্রথম নাগরিকত্ব প্রাপ্ত রোবট সোফিয়া দ্য হিউম্যানয়েড। এই রোবটকে নাগরিকত্ব দেয় সৌদি সরকার। মার্কিন অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের মত দেখতে ওই রোবট তার নাগরিকত্বের বিষয়ে লাইভ শো’তে সাক্ষাতকার দিয়েছে। সে বলেছিলো, পৃথিবীর প্রথম রোবট হিসেবে নাগরিকত্ব পেয়ে সে অত্যন্ত গর্বিত। সৌদি সরকারকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলো সে।
সোফিয়া নামের এই রোবটটির নির্মাতা হংকংয়ের সংস্থা হ্যানসন রোবোটিক্স। মানুষের মতই যাবতীয় হাবভাব তার। এমনকী রেগে তাকাতে পারে, চাইতে পারে হাসিমুখেও। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল সোফিয়াকে প্রথম সক্রিয় করা হয়। এতে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করা হয়েছে। আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভিজুয়াল ডেটা প্রসেস করার ক্ষমতা। এটি মানুষের মুখের অঙ্গভঙ্গি নকল করতে ও মুখভঙ্গি দেখাতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাধারণ কথোপকথন, বিশেষ করে কোনো বিশেষ বিষয়ের ওপর আলোচনা চালাতে পারে। এখন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
এই আলোচনা-সমালোচনার রেশ থাকতে থাকতেই দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি আসর ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এর উদ্বোধনীতে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছে সোফিয়া।
পৌঁছেই দেশের সরকারি বিমান সংস্থার সৌজন্যমূলক স্বীকৃতি পেয়েছে সে। সৌদি নাগরিকত্ব পাওয়া বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট মানবীকে ‘গোল্ড মেম্বারশিপ’ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সরকারের তথ্যপ্রযুক্তিবিভাগ জানিয়েছে রোবট সোফিয়াকে সৌজন্যতা জানাতে বাংলাদেশ বিমানের সোনালি সদস্য বা ‘গোল্ড মেম্বারশিপ’ দেয়া হয়েছে।
রোবট শব্দটির ১৯২১ সালে প্রথম ব্যবহার করেন নাট্যকার ক্যারেল কাপেক।নাট্যকার ক্যারেল কাপেক ‘রসিউম’স ইউনিভার্সাল রোবট’স নামে একটি মঞ্চ নাটক তৈরি করেন।নাটকটিতে মানুষ তাদের প্রয়োজনে উন্নত মানের রোবট তৈরি করেছিলো।কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে মানুষকেই তারা তাদের দাস বানিয়েছিলো।তারপর থেকে এই তগল্পের উপর নির্ভর করে নির্মাণ করা হয়েছে জগৎ বিখ্যাত সব সিনেমা। তারপর থেকেই স্বয়ংক্রিয় এই মেশিনকে আমরা রোবট হিসাব চিনতে শিখেছি।
তবে রোবটের ধারণা লুকিয়েছিলো খৃষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দে গ্রিক গণিতবীদ আর্কিটাসের “The Pigeon” নামের একটি যান্ত্রিক বাষ্পচালিত পাখি তৈরি মধ্যে।এর প্রায় দীর্ঘদিন পর রেনেসাঁ কালীন ইতালিতে, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪২৫-১৫১৯) ১৪৯৫ সালের কাছাকাছি একটি হিউম্যনোয়েড রোবটের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে ধারনা করা হয়। ১৯৫০-এর দশকে আবিষ্কৃত দ্য ভিঞ্চির নোটবুকগুলি ছিল একটি যান্ত্রিক নাইটের বিস্তারিত অঙ্কন।লিওনার্দোর আঁকা রোবট বসতে সক্ষম এবং তাদের মাথা এবং চোয়াল নাড়াতে পাড়ে। নকশাটি শারীরিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা ছিল বলে জানা যায়।