ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে নামার আগে থেকেই হটফেভারিট তারা। ময়দানি লড়াই শুরুর আগে বোদ্ধারা হিসাবের খাতায় অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডকে। শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভাবা হচ্ছিল মরগানের দলকে। সেটিকে সত্যি প্রমাণ করতে আর মাত্র একটি জয় দরকার ইংলিশদের।
দ্বাদশ আসরে লিগপর্বে শুরুটা দারুণ ছন্দে হয় ইংল্যান্ডের। মাঝপথে ছন্দপতন ঘটে। শেষদিকে আবার দৃঢ়তা দেখয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় স্বাগতিকরা। সেমিতে অলরাউন্ড নৈপুণ্য উপহার দিয়েই ফাইনাল নিশ্চিত করে মরগানের দল।
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পায় ইংল্যান্ড। সাউথ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়ে শুভসূচনা করে থ্রি-লায়ন্সরা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩১১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তারা। যার জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিক বোলারদের তোপে ২১১ রানেই গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা।
দ্বিতীয় ম্যাচেই বড় ধরনের ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের কাছে ১৪ রানে হেরে যায় মরগানবাহিনী। নটিংহ্যামে পাকিস্তানের করা ৩৪৮ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৩৪ রানে আটকে যায় ইংলিশরা। ছন্দপতন ঘটে স্বাগতিকদের।
নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে অবশ্য বড় কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি ইংল্যান্ডকে। বাংলাদেশকে ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফেরে তারা। কার্ডিফে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৮৬ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে সহজ জয় পায় ইংল্যান্ড। ৮ উইকেটের বড় জয় দিয়ে টেবিলে শক্তিশালী অবস্থান জানান দেয় তারা। উইন্ডিজের করা ২১২ রান ৮ উইকেট ও ১০১ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় দিয়ে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে ইংল্যান্ড। ওল্ড ট্রাফোর্ডে মরগানের ৭১ বলে ১৪৮ রানের দানবীয় ইনিংসে ভর করে আসর সর্বোচ্চ ৩৯৭ রানের পাহাড় গড়ে দলটি। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪৭ রানে আটকে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস।
এরপরই ছন্দপতন। টানা দুই হারে সেমিফাইনালের পথ কঠিন হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। প্রথমে শ্রীলঙ্কার কাছে এবং পরে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় থাকে স্বাগতিকরা। লিডসে শ্রীলঙ্কার করা মাত্র ২৩২ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১২ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
কেনিংটন ওভালে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬৪ রানে হেরে কঠিন সমীকরণের মুখে পড়ে মরগানের দল। সেমিফাইনালে যেতে হলে শেষ দুই ম্যাচে তখন জিততেই হবে। এমন সমীকরণ ছিল ইংলিশদের সামনে। দাপটের সঙ্গেই সেই চ্যালেঞ্জে উতরে যায় তারা।
প্রথমে বার্মিংহামে ভারতকে ৩১ রানে হারিয়ে কক্ষপথে ফেরে ইংল্যান্ড। মরগানদের করা ৩৩৭ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩০৬ রানে আটকে যায় ভারতের ইনিংস।
পরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘ডু-অর-ডাই’ ম্যাচে আসল দাপটের প্রদর্শনী। তাতে সেমিফাইনালের টিকিট কাটে ইংল্যান্ড। চেস্টার-লি-স্ট্রিটে নিউজিল্যান্ডকে ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শেষ চারে আসেন মরগান-রয়রা।
সেমিফাইনালে ইতিহাস ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ছিল। ১৯৯২ সালের পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কোনো জয় নেই। সেই বছরের পর বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও কোনো জয় নেই। সেসব ইতিহাস পাত্তা পায়নি। এবার নতুন করে ইতিহাস লেখে মরগানের দল।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দাঁড়াতেই দেয়নি ইংল্যান্ড। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী হয় বিশ্বকাপে প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার স্বপ্নে বিভোর ইংলিশরা। অস্ট্রেলিয়ার করা ২২৩ রান মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১০৭ বল হাতে রেখেই টপকে যায় স্বাগতিকরা। নিশ্চিত করে স্বপ্নের ফাইনালের টিকিট।
যেখান থেকে শিরোপা কেবল এক কদম দূরে!