বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিশু সংগঠনগুলোর সেই স্বর্ণালি সময় এখন আর নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, নতুন কিছু শিশু সংগঠন ভিন্ন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করেছে। সাহিত্য-সংস্কৃতির পাশাপাশি শিশুদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলাও তাদের লক্ষ্য।
কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘর আসর, চাঁদের হাট, মুকুল ফৌজ-এসব ঐতিহ্যবাহী শিশু সংগঠনের কার্যক্রম ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসার পাশাপাশি দেশে এরইমধ্যে নতুন কিছু শিশু সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব সংগঠনের কিছু বিষয়ভিত্তিক, কেউ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকেন্দ্রিক। এরকম একটি স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন। প্রজনন স্বাস্থ্য, নেতৃত্ব তৈরিসহ আরো কিছু বিষয়ে কাজ করছে সংগঠনটি।
স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সিইও ফারজানা ব্রাউনিয়া। এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের তিনটি লেয়ারে ৩০ লাখ কর্মী রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ৪ কোটি ছেলে-মেয়েকে আমরা ধীরে ধীরে নেটওয়ার্কে নিয়ে আসব। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, আমরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করছি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে তাদেরকে আরো এগিয়ে দিচ্ছি, তথ্য দিচ্ছি। কিন্তু এর বাইরেও যে কাজগুলো করা হয়, তা হচ্ছে তাকে নেতৃত্ব শেখানো হয়, শেখানো হয় সৎ থাকার কী কী সুবিধা রয়েছে। এবং কী করে একটি মানুষ সৎ হওয়ার সাথে সাথে পুরো সমাজে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।’
একটু ভিন্ন আঙ্গিকে শিশুদের সাংস্কৃতিক চেতনায় ঋদ্ধ করার চেষ্টা করছে কয়েক বছর ধরে সক্রিয় ‘বাতিঘর’। তবে এটি কোন শিশু সংগঠন নয়, শিক্ষালয়।
বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান শোয়েব বলেন, ‘ আমরা প্রতি মাসে একদিন শিশুদের নিয়ে ক্লাস রুমের বাইরে ক্লাস করতে যাই। সেটা কখনো প্রকৃতির কাছে, কখনো কোন ঐতিহ্যবাহী জায়গায়। ঘুরতে ঘুরতে গল্প শুনতে শুনতে তারা তাদের অতীত জানে। তাদের প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। পাশাপাশি এই যে ছোটাছুটি করা, আনন্দ করা, বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করা-এর মাধ্যমে একটি শৈশবের আনন্দ পাওয়া যায়। প্রতিমাসে একটা মাটির কাজ করে তারা। মাটি দিয়ে ইচ্ছেমতো যা খুশি বানায়। এভাবে তাদের মনের বিকাশ হয়।’
শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের জনপ্রিয় উপন্যাস ও টিভি সিরিজ-ছোটকাকু। এর পাঠক, দর্শক ও শুভাকাঙ্খীরা মিলে গড়ে তুলেছেন ‘ছোটকাকু ক্লাব’। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্য করা ও তাদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ছোটকাকু ক্লাব। এই সংগঠনের আহবায়ক কবি ও ছড়াকার আমীরুল ইসলাম। ছোটদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তিনি।
আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটকাকু একটি আদর্শবান চরিত্র। আমরা চেয়েছি ছোটকাকুর এই আদর্শকে ধরে ছোটকাকুর নৈতিকতা, ছোটকাকুর মূল্যবোধ-এগুলোকে ধরে দেশব্যাপী যদি ছোটদের মধ্যে একটা ছোটকাকুর ইমেজ তৈরি করা যায় সংগঠন ভিত্তি করে, তাহলে আমাদের যে স্বপ্নটা, সেটা বোধহয় সফল হবে। কারণ একটা মূল্যবোধহীন যে সমাজ, এই সমাজে ছোটরা যাতে নষ্ট না হয়। তারা যেন ছোটকাকুর আদর্শ নিয়ে বড় হয়, বেড়ে ওঠে।’
দেশের নানা জায়গায় আরো কিছু নতুন শিশু সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তবে সবার আশা একটাই, সমাজের অবক্ষয় ও অন্ধকার দূর করে এই শিশুরাই গড়ে তুলবে আলোকিত আগামী।