অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির টার্গেট পূরণে আমেরিকা পৌঁছানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হলেও লন্ডন পৌঁছানো গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও করের আওতা বাড়িয়ে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।
তবে বিএনপির অভিযোগ, লুটপাটের ক্ষতিপূরণ পোষাতে সরকার করের আওতা ও পরিমাণ বাড়াচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা সভায় প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিকসহ একশ’ অতিথি।
এতে মূল প্রবন্ধে ডক্টর মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারী খাতে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে হবে। আর রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি লাগবে প্রায় ৩৭ শতাংশ।
বাস্তবায়ন অসম্ভব না বললেও সরকারের বাস্তবায়ন যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সিপিডি।
এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম। সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এখানে দুটো সমস্যা দেখছি। যে কারণে বাস্তবানয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। এক. প্রশাসনিক জড়তা এবং দুই. বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নে কেনাকাটায় সুশাসনের অভাব।’
তিনি আরও বলেন, কর বাড়ানোর উল্লফনে শুধু ভাঙ্গলেই হবে না, প্রবৃদ্ধিকেও করতে হবে দ্বিগুণ।
বিএনপি আমলের বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দাবি করেন, ২০০৫-০৬ সালের চেয়ে অর্থনীতির সবগুলো সূচকে এখন নিম্নগতি।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার পরিসংখ্যানের বিভ্রান্তিতে অর্জনের বাগাডম্বর করছে, আবার করের আওতা বাড়িয়ে লুটেরাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে জনগণের টাকায়।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের করের টাকা, জামানতের টাকা কেউ লুটপাট করে চলে যাচ্ছে, আর আপনি সেটার সহযোগিতা করছেন এবং জনগনের টাকাই আবার সেটা পূরণ করছেন।’
আর্থিকখাতে কিছু অপচয় আর লুটপাটের কথা স্বীকার করলেও সূচকের নিম্নগতি মানতে নারাজ অর্থপ্রতিমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রবৃদ্ধি কম হলেও রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স এবং রিজার্ভসহ সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকে বাংলাদেশ ৬ বছরে এগিয়েছে বলে মনে করেন এই দুই মন্ত্রী।
অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘অপচয়টা পদ্ধতিগত অপচয়। এটা ঐতিহাসিকভাবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নতুন নতুন বিবাদ সৃষ্টি করছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। এই অবস্থার মধ্যেও আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে রাখাটা বিরাট অর্জন না?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা টার্গেট করেছিলাম আমেরিকায় যাবো। আমেরিকায় পৌঁছাতে পারি নাই। কিন্তু লন্ডন পর্যন্ত তো পৌঁছালাম।’
সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, সব বিষয়ে সবাই একমত হবেন না। তবে খেয়াল রাখা জরুরি যেনো সব মিলে সব সমালোচনা ইতিবাচক ফল আনে।
তিনি বলেন, বাজেটের সব বিষয় নিয়ে সবাই একমত হবেন এমনটা কেউ আশা করে না। কিছু বিষয়ে সবাই একমত হবেন, কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আলোচনা, সমালোচনা যেনো নৈর্ব্যক্তিক হয়। পুরো প্রক্রিয়া যেনো বাস্তবায়নে অবদান রাখে।
আলোচনায় অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বাজেটের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরের আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।