দুই শিশুকে নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের অনড় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আপনারা একটু পজিটিভলি ভাবুন, আমরা চাই বাচ্চা দুটি পারিবারিক পরিবেশে থাকুক।’
আদেশ অনুযায়ী দুই মেয়েসহ তাদের মা-বাবা এবং ফুপু আজ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থিত হন। এরপর দুই পক্ষের আইনজীবীর শুনানি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আইনজীবীসহ দুই মেয়ে এবং তাদের মা-বাবা ও ফুপুকে খাস কামরায় ডেকে সবার বক্তব্য শুনেন আদালত।
আজ শুনানির শুরুতে মায়ের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতকে বলেন, ‘বাচ্চাদের মা ঢাকার বারিধারায় একটি বাসা ভাড়া করেছে। আমরা চাই ওই বাসায় বাচ্চারা মায়ের সাথে থাকুক। বাচ্চাদের বাবাও তার মত করে ওই বাসায় আসুক-থাকুক। কারণ, এইকয়দিনে বাচ্চাদের মধ্যে যে একটা ট্রমা তৈরি হয়েছে তা কাটুক। তারপর আপনারা এবিষয়ে চূড়ান্ত কোন আদেশ দেন।’
তবে বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম সেসময় বলেন, ‘মাই লর্ড, বাচ্চারা বাবার বাসায় থাকুন। মা বাচ্চাদের দেখতে আসুক কোন সমস্যা নেই। মা যে বাসাটার কথা বলছে সে এরিয়ায় বাচ্চাদের থাকার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে।’
শুনানিতে দুপক্ষের এমন দ্বিমুখী অবস্থানে প্রেক্ষাপটে আদালত বলেন, ‘আমরা চাই বাচ্চা দুটি পারিবারিক পরিবেশে থাকুক। আপনারা একটু পজিটিভলি ভাবুন।’
এরপর বাবার পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, মাই লর্ড আমরা তাহলে আবার দু-পক্ষ একটু বসে সিদ্ধান্ত নেই। তারপর আপনাকে জানাই। আপনি তখন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এরপর আদালত এবিষয়ে আদেশের জন্য বেলা ৩টায় সময় নির্ধারণ করেন।
দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি নারীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে আগামি ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা আগামি ৩০ দিন বিদেশ যেতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। এরপর দুই মেয়েকে বাবার হেফাজত থেকে সিআইডি উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে। এবিষয়টি গত ২৩ আগস্ট মেয়েদের বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখার নির্দেশ দেন। এসময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন আদালত। সে অনুযায়ী বা-মা শিশুদের সাথে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সময় দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের আইনজীবী আদালতে এসে জানান শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তখন আদালত উভয় পক্ষকে বলেন কোথায় থাকলে ভালো হয় সে বিষয়ে সমঝোতা করে সিদ্ধান্ত জানাতে। তব গতকাল রাত পর্যন্ত বাবা-মা এবিষয়ে এমকত হয়ে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি বলে জানান দুই পক্ষের আইনজীবী।