ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার পর তাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া, ঝিনাইদহে মেয়েকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় একজন পিতাকে শাবল, ছেনি আর হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর ফলে তার দুই পা কেটে ফেলা, সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কোপানো কিংবা গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদের সময় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার– সম্প্রতি সারাদেশে আলোচিত এমন সব অপকর্মে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের নাম উঠে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মেয়েকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করে এক পিতার দুই পা হারানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলার সব আসামিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারাবন্দী করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। গত ১৬ অক্টোবর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার নলভাঙ্গা গ্রামে বখাটেরা শাহানূর বিশ্বাসকে প্রথমে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে তার হাঁটুতে আঘাত করে। আর অন্যরা লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেটায়। এতে বর্গাচাষি শাহানূরের দুই পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি মো. কামাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের একটি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি বা করেনি। আরেকটি খবরে প্রকাশ গাইবান্ধায় গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় সাবেক দুই বিচারপতির উপস্থিতিতে সেখানে গণশুনানি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি প্রতিনিধি দল। গণশুনানিতে সাঁওতালরা আবারও দাবি করেছেন, ওই হামলায় স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম আজাদ ও সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদের ইন্ধন ছিলো। তারা বলেছেন, এই দুই ব্যক্তির ইন্ধনেই তাদের ওপর হামলা এবং বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। গত মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সেখানে হামলার আগে যে সমাবেশ করা হয়েছিলো তাতে লোকজন নেওয়ার জন্য ট্রাক ও ট্রাক্টর ভাড়া করেছিলেন স্থানীয় হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান, তার ভাই ও সমর্থকরা। ওই হামলার ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া চারজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষমতায় থেকে এমন সব অপকর্ম আমরা সব সরকারের আমলেই দেখেছি। এর কারণ ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ মনে করে থাকে, তারা সব ধরনের আইনের ঊর্ধ্বে; তাদেরকে কেউ ধরতে বা ছুঁতে পারবে না। আমরা এও দেখেছি দলের কয়েকজন ব্যক্তির এসব অপকর্মকে সরকারের কেউ কেউ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তাকে আরো প্রশ্রয় দেয়। প্রকৃত ঘটনার পাশাপাশি অপরাধীদেরকেও আড়াল করে। শুধু তাই নয়, এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলে, তাদেরকে দল এবং সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তা দমনের চেষ্টা থাকে। অথচ একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। আর যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকেন, সেই দায়িত্ব পালনে তারা বাধ্য। আমরা চাই, এসব ঘটনায় জড়িতদের আড়াল না করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। না হলে আইনের শাসনের প্রতি সাধারণ মানুষ অাস্থা হারাবে।