মাজিদ মাজিদি। একজন ইরানিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক এবং অভিনয়শিল্পী। ১৯৯৭ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ চলচ্চিত্রটি যা শ্রেষ্ঠ বিদেশী চলচ্চিত্র হিসেবে ১৯৯৮ সালের অস্কার-এর চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় ছিল। যদিও এটা শেষ পর্যন্ত রবার্তো বেনিনির ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ এর কাছে হেরে যায়। তবে মাজিদির চলচ্চিত্রটি ছিল প্রথম ইরানিয়ান চলচ্চিত্র যা একাডেমি এওয়ার্ড এর জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। নির্মাতা মাজিদ মাজিদি এই চলচ্চিত্র ছাড়াও ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’, বারান, এন্ড দ্য উইলো ট্রি, সংস অব স্পেরো’র মতো অসাধারণ সব ছবি নির্মাণ করেন। সর্বশেষ তিনি নির্মাণ করেছেন আলোচিত ছবি ‘মোহাম্মদ: দ্য মেসেঞ্জার অব গড’।
তার সর্বশেষ চলচ্চিত্রের নাম ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’। যা শুট করেছেন ভারতের দীর্ঘতম বস্তি মুম্বাইয়ের ধারাভিতে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদ কাপুরের ছোট ভাই ইশান খাট্টার এবং মালয়ালাম অভিনেত্রী মালভিকা মোহানা। ইরানের বাইরের বিষয়বস্তু নিয়ে এটাই মাজিদির প্রথম পদচারণা।
চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস প্রসঙ্গ ছাড়াও নানা বিষয়ে সম্প্রতি ইরানের এই নির্মাতা ভারতীয় একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন রঘুবেন্দ্র সিং। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন জুয়েইরিযাহ মউ
কোন বয়সে যুক্ত হয়েছিলেন চলচ্চিত্রের সাথে? প্রথম জীবনে সিনেমা নিয়ে কোন্ স্মৃতির কথা মনে পড়ে?উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শুরুতে আমি থিয়েটারে খুব আগ্রহী ছিলাম। যখন আমার বয়স তেরো/চৌদ্দ বছর তখন স্কুলের মঞ্চনাটকে অভিনয় করতাম। বছর যেতে যেতে খুব সিরিয়াস হয়ে গেলাম এ বিষয়ে। আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ব বিভাগে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম এবং থিয়েটারে কাজ করতে শুরু করলাম। থিয়েটারের পৃথিবী অনেক সীমাবদ্ধ। এটা অনেকটা বদ্ধ। আমার মনে হল সিনেমার শক্তিটা বেশি। আমি পড়েছি থিয়েটার নিয়ে কিন্তু আমার চিন্তাভাবনা সিনেমার দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়লো। বিশ বছর বয়সে সিনেমার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হল।
আমি শুরু করলাম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়েই। নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র দিয়ে শুরু, আমাদের একটা টিম ছিল, আমি অভিনয় করতাম। কিছু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্যও অভিনয় করেছিলাম যেগুলো তখনকার সফল পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছিল। তার মধ্যে দু’টো চলচ্চিত্র বেশ সফল ছিল। তখন আমার বয়স পঁচিশ। তাই তখন অন্যান্য প্রযোজকেরা অভিনয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন আমাকে, কিন্তু আমার সেটা পছন্দ হল না। এমনকি তখনও যখন আমি অভিনয় করছিলাম সেটা শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার জন্যই করছিলাম। এবং খুব তাড়াতাড়িই অভিনয় জগত থেকে অবসর নিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম অভিনয় জগতে থাকতে থাকতে না বৃদ্ধ হয়ে যাই! আমি এটা পছন্দ করছিলাম না কারণ নিজের একটা পৃথিবী গড়ে তুলতে চাইছিলাম। অন্যের পৃথিবীতে অভিনয় করার ইচ্ছে ছিল না। তাই অভিনয়টা তখনই ছেড়ে দিলাম যখন আমার হাতে অনেক অফার ছিল যা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব ছিল।
অন্যদিকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কোন টাকাই হাতে ছিল না। প্রযোজক খুঁজে বের করার প্রয়োজন ছিল। নিজের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে অর্থ উপার্জনের জন্য আমার অভিনয় করার প্রয়োজন ছিল কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে যদি আমি অভিনয় করি তাহলে নির্দেশনায় হয়তো নাও ফিরে আসতে পারি। আমি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করলাম এবং কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করলাম ১৯৯২-৯৩ এর দিকে। এটা চালিয়ে গেলাম আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করার পূর্ব পর্যন্ত। প্রথম চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হল এবং এই চলচ্চিত্র উৎসবসহ অন্যান্য উৎসবেও বেশ সাফল্য পেয়েছিল। যাই হোক, দিনগুলো কঠিন ছিল কারণ ওগুলো আর্ট ফিল্ম ছিল যে কারণে বক্স-অফিসে অতোটা সফল ছিল না। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটলো যখন আমার তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ এলো, অনেক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলাম।
খুবই কঠিন ছিল চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা কারণ প্রায় সবাই রিজেক্ট করছিল এবং কেউই নির্মাণের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে রাজি ছিল না। কিন্তু একবার যখন চলচ্চিত্রটি বানালাম এর পরপরই আমার জীবন অনেকটা সামনের দিকে এগোতে থাকলো। যেসমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেগুলো আবার খুলে গেল। পঞ্চাশ-ষাটটা আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড জিতে নিল চলচ্চিত্রটি অস্কারের নমিনেশন পাওয়ার আগেই। আমি বলতে পারি তখন থেকেই আমার চলার পথ বদলে গেল আর এখন আমি এইখানে।
আপনি কি মনে করেন একাডেমিক প্রশিক্ষণ জরুরী চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য?
এটা ভালো কিন্তু প্রয়োজনীয় নয়। একাডেমিতে মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে শেখা যায় কিন্তু সেটাই আপনাকে ফিল্মমেকার হিসেবে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট নয়। অনেকেই ফিল্মমেকিং বিষয়ে পড়ছে কিন্তু কত জন ফিল্মমেকার হচ্ছে? কীভাবে চলচ্চিত্র বানাতে হয় সেটা শেষ পর্যন্ত শেখা হল কী না সেটাই বিষয়। আমি বলতে চাইছি যে অন্য আরও অনেক বিষয় আছে যা গুরুত্বপূর্ণ ফিল্মমেকিং পড়ার সাথে সাথে, যেমন – জীবনের অভিজ্ঞতা। যতই একাডেমিতে আমরা টেকনিক্যাল বিষয়ের সাথে যুক্ত হই ততই জীবনকে ভুলে যাই। এবং সমস্তকিছু তত্ত্বের ভিত্তিতে খুঁজতে চেষ্টা করি, আমরা সেটাকে যাপন করি না। সেসমস্ত কিছু শেখার পর আমরা কোনো একটা স্টুডিওতে যাই এবং একটা ফিল্ম শুট করি কিন্তু তখন আঁচ করি অন্য আরও অনেক উপাদান দরকার মানুষের শিল্প নির্মাণের জন্য।
আপনি জানেন, একটা রুটি বানানো মানে কেবল রুটিটা বানানো নয়, প্রতিটা ধাপ, যেমন বীজ রোপন থেকে শুরু করে প্রতি ধাপই সঠিক হতে হবে। কারণ যে বীজ সঠিকভাবে রোপন করা হয় না তা নষ্ট হয়ে যায় এবং এ থেকে আপনি রুটি বানাতে পারবেন না।
সবার প্রথমেই, আপনার প্রতিভা প্রয়োজন। প্রতিভা এবং যেকোন কিছু পছন্দ করার মধ্যে বিরাট তফাৎ আছে। অনেককে দেখি এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে অভিনয়ে অথবা অন্য যেকোন ক্ষেত্রে যারা দ্বিধান্বিত এই বিষয়ে যে কী তারা পছন্দ করেন আর তাদের ট্যালেন্ট কোন বিষয়ে।
আমার মনে হয় যারা যেকোন বিষয়ে আগ্রহী তারা শিক্ষক হতে পারেন বরং। তারা সিনেমা এবং অন্যান্য সংযুক্ত শিল্প সম্পর্কে পড়াতে পারেন। তারা নিজেরা তত্বগুলো সম্পর্কে ভালভাবে জেনে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু প্রতিভা অন্য রকম একটা জিনিস। এটা এরকম না যে আপনি ফিল্মমেকিং সম্পর্কে পড়লেন আর ভালো চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে গেলেন। আমাদের প্রতিভা আর আগ্রহ বিষয়ে দ্বিধান্বিত থাকা উচিৎ নয়। আমি দেখেছি একশ জনের মধ্যে একজন সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রির অংশ হতে চায় না, ৭০-৮০ শতাংশ আগ্রহী কিন্তু তারা প্রতিভাবান নয়। আর অভিজ্ঞতাকে কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা সম্ভব না।
যদি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম আর কোর্সটা চার বছরের হতো, তাহলে আমি চাইতাম দু বছরের জন্য সবাই তত্ত্ব পড়তে পারে কিন্তু বাকি দুই বছরের জন্য সবাইকে যেন এই সমাজের মানুষের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় শুধুমাত্র যে সমাজে সে বাস করে সে সমাজকে বোঝার জন্য। আপনার নিজের মানুষদের বুঝতে হবে, নিজের সংস্কৃতি, নিজের সমাজ যতটা বোঝা সম্ভব। আমাদের এমন শিক্ষার্থীও আছে যারা শুধু নিজের বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাটা মাত্র চিনে। এমনকি নিজের শহরকেও তারা ঠিকঠাক জানে না। যখন আপনি নিজের সংস্কৃতি, নিজের মানুষ, নিজের শহরকে জানেন না তখন আপনি কি করে চলচ্চিত্র নির্মাতা হবেন!
যখন আমি জ্ঞানের কথা বলছি তখন সেটা প্রাপ্ত কোন জ্ঞান নয় বরং গবেষণা, পড়া আর বোঝার মাধ্যমে অর্জন করা জ্ঞান। শিল্পের একটা গোপন তত্ত্বই হচ্ছে সমস্ত কিছুকে গভীরভাবে দেখা, কারণ সিনেমা সৃষ্টিই হয় ডিটেইলসের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন একটি চলচ্চিত্রে ভাল মুহূর্ত থাকে না এবং চলচ্চিত্র যখন ‘ডিটেইলস’কে গুরুত্ব দেয় না তখন সেটা ভাল চলচ্চিত্র হতে পারে না কখনোই। কখনো বা আপনি একটি চলচ্চিত্র দেখবেন যেটি নির্মাণের দিক থেকে যথাযথভাবে নির্মিত কিন্তু তাতে কোন প্রাণ নেই। এই যে প্রাণহীনতা এটির উৎপত্তি হয় সূক্ষ্ম জিনিসগুলো পর্যবেক্ষণ না করতে পারা থেকেই। এটা এরকমই যে আপনার সামনে খুব ভাল একটা খাবার আছে কিন্তু তা স্বাদহীন।
আমরা শিল্প এবং সিনেমার পেছনের কারিগরি দিক সম্পর্কে শিখতে পারি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে শিল্পের প্রাণ। কখনো কখনো আমরা অনুভব করি শিল্পকর্মটি অগভীর। সঠিক কারিগরী নৈপুণ্যের পরেও শিল্পবস্তুটি দেখতে যান্ত্রিক দেখায় প্রাণ না থাকলে। ঠিক সেভাবেই, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আমরা যদি কেবল কলাকৌশলই শিখি তাহলে আপনি শিখতে পারবেন কি করে ক্লোজ-আপ বা লঙ শট নিতে হয় অথবা কীভাবে একটা শট কেটে ক্লোজ-আপে যেতে হয় কিন্তু যা শিখতে পারবেন না তা হল কীভাবে এবং কেন আমাদের একটা ক্লোজ-আপ দরকার। এভাবেই তখন প্রাণহীনতার সৃষ্টি হয়।
এটা তৈরি হয় অভিজ্ঞতা থেকে। আমি বলতে চাইছি প্রতিটা শটের জন্যই একটা দর্শন বা লক্ষ্য থাকতে হবে। কেন আপনি এখানে একটা ক্লোজ-আপ শুট করবেন, কেন এই দু’টো শটের মধ্যে মুভমেন্ট থাকবে – এটা প্রাণ সৃষ্টি করে এসবের মধ্যে। প্রাণ বা আত্মার স্পর্শ থাকতে হবে এসমস্তকে একসাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে। আপনাকে জানতে হবে কেন এবং কোথায় আপনি আপনার ক্যামেরাটা স্থাপন করবেন, মানে কোন এঙ্গেলে এবং আপনাকে এটাও জানতে হবে যে আপনার দর্শকের মধ্যে কী ধরণের প্রভাব আপনি ফেলতে চাইছেন। এরকম অন্তর্দৃষ্টি লাভের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, সতর্কতার সাথে জীবনকে দেখা উচিৎ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং আপনাকে অনেক অনেক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য।
বক্স–অফিসকে কত গুরুত্ব দেন আপনি যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন?
বক্স অফিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি কী বিক্রি করছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ আসলে। তাই ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনি নিজেকে বিক্রি করছেন শুধুমাত্র বক্স অফিসের সাফল্যের জন্য। অনেক ভারতীয় পরিচালক যারা বক্স অফিসে বেশ জনপ্রিয় আমাকে বলেছেন তারা নিজেদের চলচ্চিত্র পছন্দ করেন না। তাহলে কেন তারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন? আমার এরকম বিখ্যাত একজন ভারতীয় পরিচালকের সাথে দেখা হয়েছিল যিনি আমাকে বলেছিলেন তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে এসেছিলেন ‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ এর প্রতি ভালোবাসা থেকে কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি নিজের সিনেমার ধরণ পরিবর্তন করে ফেললেন। তিনি বললেন – এখন মানুষ একটা নির্দিষ্ট ধরণের চলচ্চিত্রই আমার কাছে চায় এবং তারা আমাকে পরিবর্তিত হতে দিচ্ছে না এখন আর।
আমার আদর্শ হচ্ছে এক ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যা অধিকাংশ দর্শকের কাছেও পৌঁছোতে পারবে এবং শৈল্পিক ধরণেও যা উতরে যাবে। আমার বেশিরভাগ চলচ্চিত্রেই এখন পর্যন্ত এমনটা ঘটেছে।
‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’ এর ভাবনা কী করে মাথায় এলো?
আমার উদ্দ্যেশ্য ছিল ভারতে একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করার। তাই আমি এমন একটা বিষয় ভাবছিলাম যা ভারতে শুট করা যায়। হয়তো, এরকম ভাবছিলাম অন্য কোন দেশেও শুট করতে পারি কিন্তু মূল গল্প-ভাবনাটা হতে হবে ভারতকে কেন্দ্র করে। এটার মানে হল আমি চাইছিলাম ড্রামাটিক পারিপার্শ্বিকতা হতে হবে ভারতীয়।
আপনি কী কী অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন ভারতে? কারণ ভাষা, সংস্কৃতি, জায়গাটা কিছুই তো আপনার পরিচিত ছিল না?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল লোকেশন কারণ চলচ্চিত্রের ৭০ শতাংশই ঘরের বাইরের দৃশ্য, আসল লোকেশনেই। ভীড়ের মধ্যে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া এবং যে অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে চাইছি সেটাই ধারণ করা– এগুলো সহজ ছিল না। কিন্তু ভাগ্য ভাল ছিল তার সবটুকুই হয়ে গেল। মুম্বাইয়ের সবচে জনবহুল কিছু জায়গাতেও আমরা শ্যুটিং করেছি।
আপনি সবসময় বলেন সত্যজিৎ রায় এর কাজের দ্বারা আপনি অনুপ্রাণিত। উনার কোন চলচ্চিত্রটি আপনি সবচে বেশি পছন্দ করেন?
পথের পাঁচালী। এটা এমন একটা চলচ্চিত্র শুধু আমি নই আমার মনে হয় বিশ্বের সকল চলচ্চিত্র নির্মাতার বার বার দেখা উচিৎ। কারণ যতবারই আপনি দেখবেন ততবারই এটা নতুন, এবং আপনি নতুন কিছু না কিছু শিখবেন। এটা খুব কঠিন এধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হল কেন ভারতে এরকম আর কোন চলচ্চিত্র আমরা পেলাম না। আপনারা (ভারতীয়রা) এ চলচ্চিত্রের ব্যাপারে উদাসীন। আমার মনে হয় দোষটা সরকারের। তাদের উচিৎ ছিল তরুণ প্রজন্মের এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের জেদটাকে উৎসাহিত করা। বলিউড তার নিজস্ব উপায়েই চলছিল। এটা ইন্ড্রাস্ট্রি- তারা টাকা লগ্নি করে এবং টাকা উপার্জন করে। এটা ঠিকই আছে তারা যা করছে কিন্তু সরকারের উচিৎ শিল্পকে উৎসাহিত করা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। সরকারের সহযোগিতাসহ একটি সমান্তরাল পথ তৈরি করা উচিৎ যাতে তরুণ প্রজন্ম নিরীক্ষাধর্মী কাজ করার ভরসা পায়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, তাজমহল। যদি এটার একটা অংশও ভেঙে যায় তাহলে কে সংস্কার করবে সেটা? জনগণ? জনগণ অংশ নিবে অবশ্যই। কিন্তু সরকারকেই আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে। সংস্কৃতিও তাই। যদি এক্ষেত্রে কিছু নষ্ট হয়ে যায়, কোন অভাবের সৃষ্টি হয়, সরকারকেই সেটা দেখতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে, অর্থ ব্যয় করতে হবে। যদি তারা দশটা চলচ্চিত্রও নির্মাণ করে আর সেই কাজগুলো ভাল না হয় তাতেও কিছু যায় আসে না, হয়তো এগারো নম্বর চলচ্চিত্রটা ভালো হবে। তাদের সহযোগিতা করতে হবে এবং পথ প্রস্তুত করে দিতে হবে।