এই কোহলি কি সেই কোহলি?— এমন একটা প্রশ্ন আপনার মাথায় আসতেই পারে। কদিন আগে বিরাট কোহলির ব্যাটিং অনুশীলনের সময়ব্যাপ্তি নিয়ে মুগ্ধতার কথা বলেছিলেন আফগানিস্তানের তারকা রশিদ খান। মাঠে দলে নিয়ে তার সিরিয়াসনেসের কথাও সবার জানা। কিন্তু সেই কোহলিই কিনা মুষড়ে পড়েছেন। গত এক মাসে প্রিয় ব্যাটটাকে একবারের জন্যও উঁচিয়ে দেখেননি।
মাঠে অবিশ্বাস্য গতি এবং আগ্রাসনের জন্য সুপরিচিত কোহলি। সেই মারকুটে ব্যাটারই কিনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে খেলা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। কোনোরকম রাখঢাক না রেখেই কোহলি জানিয়েছেন সেই ভয়ংকর সময়ের কথা। বলেছেন, তিনি ঠিক ছিলেন না—ক্লান্ত বোধ করতেন। পালিয়ে বাঁচিয়েছেন নিজেকে। তবে ফেরার কথাও বলেছেন, নিজের সব শক্তি পুঞ্জিভূত করে ফিরিয়ে আনবেন নিজেকে।
‘আমি এমন একজন ব্যক্তি যে জেগে উঠে বলে, আজ আমার জন্য কী আছে। দিনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমি অংশ নিয়ে থাকি। এবং আমার সেই অংশ নেওয়াটাও আনন্দে ভরা থাকে। এটাই আমি সব সময় করি। লোকে আমাকে অনেক জিজ্ঞেস করে, তুমি কীভাবে এটা কর? কীভাবে এত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এসব করো? তাদের শুধু বলি, খেলতে ভালোবাসি এবং এই সত্যটিকে ভালোবাসি যে, প্রতিটি বলের জন্য আমার অবদান রাখার মতো অনেক কিছু আছে। মাঠে আমার সব শক্তি দিয়ে দেব। আর এটি আমার কাছে কখনও অস্বাভাবিক মনে হয়নি।’ স্পোর্টস ভিত্তিক টেলিভিশন স্টার স্পোর্টসে বলেছেন কোহলি।
বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ব্যাটার যাকে কিনা ভাবা হতো শচীনের একশ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দিবেন, সেই কোহলি শতকের দেখা পাচ্ছেন না হাজার দিনেরও বেশি সময়। সম্প্রতি ব্যাটও তার কথা শুনছিল না। ভারতের হয়ে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বিশ্রামের পর আবারও দলে যোগ দিয়েছেন ৩৩ বর্ষী ব্যাটার। কোটি কোটি দর্শক-সমর্থক আর বিশাল প্রত্যাশার চাপের পূরণে আগের মতোই আশার কথা শুনিয়েছেন কোহলি।
তবে ভারতের বোর্ড বিসিসিআইয়ের দেওয়া ভিডিওর অনেকটা সময় জুড়ে ছিল ‘মানসিক অবসাদে’ ভোগার কথা। নিজের সমস্যার কথা সরাসরি আরেকবার সামনে এনে কোহলি বলেছেন, ‘আমি মানসিক সমস্যায় ছিলাম, এটা বলতে কোনো সমস্যা নেই। এটা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু নানান দ্বিধার কারণে আমরা এসব বলা থেকে বিরত থাকি। নিজেকে মানসিকভাবে দুর্বল দেখতে চাই না। বিশ্বাস করুন, নিজেকে দুর্বল বলার চেয়েও মারাত্মক বিষয় হচ্ছে শক্তিশালী হওয়ার ভান করা।’
কোহলির ‘মানসিকভাবে’ বাজে থাকার এই সময় খুব বাজে কেটেছে তার প্রমাণ এই সময়ে একবারের জন্যও অনুশীলনে যাননি তিনি। বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারদের বুকে কাঁপন ধরানো কোহলিই কিনা টানা একমাস হাতেও নেননি ব্যাট, ‘১০ বছরের মধ্যে প্রথমবার আমি এক মাস আমার ব্যাট স্পর্শ করিনি। বুঝতে পেরেছিলাম, সম্প্রতি আমার খেলার গতি হারিয়ে ফেলেছি। আমি নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম, একসময় আমার গতি ছিল। কিন্তু শরীর থামতে বলছে। মন আমাকে বিরতি নিতে বলেছিল।’
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে আগামীকাল রাত আটটায় মাঠে নামবে ভারত। দীর্ঘ বিরতির পর এশিয়া কাপ দিয়ে মাঠে ফিরে বিরাট যেমন চাইবেন পুরোনো ফর্ম ফিরিয়ে আনতে, তেমনি দর্শক-সমর্থকরাও চাইবে ‘ক্রিকেটের রাজপূত্র’ কোহলির ব্যাট ‘বিরাট’ হয়ে আবার হাসুক।