মিয়ানমার থেকে আসা সীমান্ত বাণিজ্যের মালামাল বোঝাই একটি কার্গো বোট টেকনাফের স্থলবন্দর থেকে উধাও হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মালামালের নিরাপত্তা সহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এসব ঘটনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরে। এ নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারপরও কাটেনি অচলাবস্থা।
৩৫টি কার্গো ট্রলারে আটকে আছে কোটি টাকার পচনশীল পণ্য। একদিনে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে। রবিবার থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘট এখনো অব্যহত আছে। আজ সোমবারও বন্দরে সব ধরনের পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দর থেকে মালামালবাহী একটি কার্গো বোট উধাও হওয়ার ঘটনায় বন্দরে কর্মরত সিএন্ডএফ এজেন্টরা ধর্মঘটের ডাক দেয়ায় সপ্তাহের প্রথম দিন আজ রবিবার থেকে মিয়ানমার থেকে আসা টেকনাফ স্থলবন্দরে কোন পণ্যবাহি ট্রলারের মালামাল খালাস হয়নি। ধর্মঘটের কারণে রবিবার থেকে পন্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সোমবার পর্যন্ত বন্দরে মিয়ানমার থেকে আসা ৩৫ টি মালামাল বোঝাই কার্গো বোট মালামাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব জাহাজ ও কার্গো বোটে রয়েছে কোটি কোটি টাকার পচনশীল পণ্য।
সিএন্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার থেকে ৭০০ বস্তা সুপারি ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে একটি কার্গো ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। সাদ্দাম হোসেন, ফারুক ও শওকত নামের তিন ব্যবসায়ী এই মালামাল নিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালামাল সহ কার্গো বোটটি বন্দরে এন্ট্রি করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, ঐদিন রাতেই মালামাল সহ বন্দরের ঘাট থেকে কার্গো বোটটি উধাও হয়ে যায়।
পরের দিন নাফ নদী থেকে ৫৭৪ বস্তা সুপারি ও ৮০ বস্তা কিফি সহ একটি কার্গো বোট পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বিজিবি। টেকনাফ-২ বিজিবির সদস্যরা পরে মামলা দিয়ে পণ্যসহ কার্গো বোটটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেয়।
এ ঘটনাকে অন্যায় দাবি করে টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন রবিবার সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে বন্দর থেকে কোন মালামাল খালাস হয়নি। অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রবিবার বিকেলে স্থলবন্দরে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানালেও ব্যবসায়ীরা আজও ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি সহ টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বদি। তারা সমস্যগুলো সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে জানান।
ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল শুক্কুর জানান, ধর্মঘট এখনও অব্যাহতে আছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি জানিয়েছেন, টেকনাফ স্থল বন্দর নিয়ে বন্দরের ভেতরের একটা চক্র ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সম্প্রতি উঠে পড়ে লেগেছে তারা। আগামী রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই এই চক্রের লক্ষ্য।
তিনি জানান, বন্দরের জেটি ঘাট থেকে মালামালসহ কার্গো বোট উধাও এবং পণ্য চুরি হওয়ার ঘটনা রহস্যজনক। তিনি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, টেকনাফ স্থল বন্দর ব্যবহারকারীসহ সকল পক্ষকে নিয়ে সভা হয়েছে। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।