ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারন্যাশনাল কেস কনফারেন্স অন বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইসিসিবিএম ২০২৫) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
ব্র্যাক বিজনেস স্কুল (বিবিএস) এবং ইমারেল্ড পাবলিশিংয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এবারের কনফারেন্সের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “এআই ইনোভেশন অ্যান্ড সাস্টেইনিবিলিটি: রিথিংকিং এন্টারপ্রাইজ, প্র্যাকটিস অ্যান্ড লিডারশিপ ইন দ্য গ্লোবাল সাউথ।”
ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের হাত ধরে বাংলাদেশে কেস কনফারেন্সের সূচনা হয়। ২০২৪ সালে বিবিএস প্রথমবারের মতো এই কনফারেন্সের আয়োজন করেছিল। এবারের কনফারেন্সটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)-এর চেয়ারম্যান কামরান টি. রহমান। তিনি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাস করছি, যা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনগুলো তাদের হবে, যারা সঠিক প্রশ্ন করতে পারে, চাপের মধ্যে ক্রিটিক্যাল চিন্তা করতে পারে, লোভ ও মোহের মধ্যেও নৈতিক থাকতে পারে এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতিতেও সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারে।”
কনফারেন্সের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন হিউম্যানাইজিং গ্লোবাল টেকনোলজির গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ শরিয়ার পাভেল।
তিনি বলেন, অ্যাডভান্সড এআই ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এআই এমনভাবে তৈরি করা দরকার, যেন এটি মানুষের জন্য সঠিক সময়ে সহজ ও কার্যকর সমাধান দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এআই এর কারণে বিশ্বের জিডিপি ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেনাটা লিমিটেডের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ কায়সার কবির।
স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা ছিলেন স্যার ফজলে। স্যার ফজলে একাধারে দূরদর্শী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং দক্ষ বাস্তবায়নকারী ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের স্যার ফজলের জীবন ও কাজ অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নমনীয় থাকা ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আব্দুর রব। তিনি দেশেই সাশ্রয়ী প্রযুক্তি তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির লক্ষ্য হলো গ্লোবাল সাউথে নেতৃত্ব দেওয়া এবং আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক সহযোগিতা গড়ে উঠছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বর্তমানে অ্যাগ্রিটেক, ফ্যাশন ডিজাইনসহ আরও যুগোপযোগী বিষয়ে কাজ করছে- বলেন প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিবিএস এর ডিন প্রফেসর মুজিবুল হক। তিনি বলেন, সমাজ ও বিশ্বে নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে এই ধরণের কনফারেন্স ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি দেশীয় প্রেক্ষাপটে তৈরি কেস স্টাডির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রফেসর মুজিবুল বলেন, এসব কেস শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা দিয়ে কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। তিনি এজন্য শিল্প ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার আহ্বান জানান।
এই কনফারেন্সে মোট ৯৭টি গবেষণা প্রবন্ধ জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৬৯টি প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য নির্বাচিত হয় যেগুলো একটি প্যারালাল সেশনে উপস্থাপন করা হয়। নির্বাচিত প্রবন্ধগুলোর অ্যাবস্ট্রাক্ট নিয়ে একটি প্রসিডিং প্রকাশ করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে, একটি শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক কেস ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগকে তুলে ধরেছে এই কনফারেন্সটি। যেখানে অ্যাকাডেমিক মান বজায় রাখার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে।
বিভিন্ন বিষয় ও ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে যে এই কনফারেন্সটি আধুনিক ব্যবসায় শিক্ষা বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। এর ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নীতিনির্ধারকেরা বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।
এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে দেশ ও বিদেশের শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
কনফারেন্সটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এএমএ (অথেনটিক ব্রাজিলিয়ান কফি), বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি, ইফাদ গ্রুপ, ঢাকা ব্যাংক পিএলসি এবং ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি।








