লিওনেল মেসিকে রেকর্ডের বরপুত্র বলা যায়। মাঠে নামলেই রেকর্ডের খাতা প্রস্তুত থাকে মহাতারকা এই বুঝি কিছু একটা করে বসলেন, ‘চটজলদি লিখতে হবে।’ আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে নিয়ে এপর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে আলোচনা সেটি হল, ‘তিনিই কি সর্বকালের সেরা?’ কথার পিঠে কথা চড়িয়ে তর্ক গড়াবে অনেকদূর। সেসব একপাশে রেখে সংখ্যায়-সংখ্যায় তার কীর্তিগুলো দেখে নেয়া যাক।
জাতীয় দল জার্সিতে মেসির যত অর্জন
২৫<> বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার তালিকায় এখন যৌথভাবে শীর্ষে মেসি। কাতারে ফাইনাল নিশ্চিতের রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে রেকর্ডটি গড়েছেন। ফাইনালে নামলেই রেকর্ডটি একার করে নেবেন, ছাড়িয়ে যাবেন বৈশ্বিক আসরে ২৫টি ম্যাচ খেলা লোথার ম্যাথিউসকে।
২৪<> বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় খেলার পাশে নিজের নাম লিখতে লিওকে ফাইনালে অন্তত ২৪ মিনিট খেলতে হবে। ফ্রান্সের বিপক্ষে নির্দিষ্ট এই সময় মাঠে থাকলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে থাকার রেকর্ডও গড়বেন তিনি। বর্তমানে পাওলো মালদিনির (২,২১৭ মিনিট) থেকে ২৩ মিনিট পেছনে আছেন।
১৮<> বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবেও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মেসি। ১৮টি ম্যাচে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড পরে নেমেছিলেন। তালিকায় দুইয়ে আছেন মেক্সিকোর রাফায়েল মারকুয়েজ (১৭) ও তার স্বদেশি কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা (১৬)।
১৬<> জার্মান তারকা সাবেক মিরোস্লাভ ক্লোসার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ ম্যাচ জিতেছে মেসি। ১৬ জয় নিয়ে দুইয়ে থাকা মেসি ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিলে ক্লোসার ১৭ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন।
১১<> ফিফা বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে বেশি গোল করার তালিকায় যৌথভাবে ইয়ূর্গেন ক্লিন্সম্যান ও সান্দর কোকসিসের সঙ্গে ছয় নম্বরে আছেন মেসি। বৈশ্বিক আসরে সবচেয়ে বেশি জাল খুঁজে পেয়েছেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা (১৬), দুইয়ে ব্রাজিলের রোনাল্ডো (১৫)। এরপর যথাক্রমে জেরার্ড মুলার (১৪), জাস্ট ফন্টেইন (১৩), পেলে (১২) এবং মেসি আছেন ১১ গোল নিয়ে। তার হাতে এখনও বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ বাকি রেকর্ড এগিয়ে নেয়ার।
৯<> শুধু গোল করাই নন, মেসি অ্যাসিস্টেও আছেন সেরা অবস্থানে। ১০ বার সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়ে তালিকায় শীর্ষে কিংবদন্তি পেলে, ৯ অ্যাসিস্টে দুইয়ে এমএল টেন।
৫<> ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেমন টানা ৫টি বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েছেন, তেমনি অ্যাসিস্টের ক্ষেত্রে রেকর্ডটি মেসির। পাঁচ বিশ্বকাপে সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর যে রেকর্ডটি আর কারো নেই।
৯৫<> লাতিন দেশের হয়ে ছেলেদের ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটি মেসির। আর্জেন্টিনা জার্সিতে তার গোল আছে ৯৫টি।
১৬<> কম বয়সে গোল করার তালিকাতেও আছেন মেসি। ১৬ বছর ১৮০ দিনে জালের দেখা পেয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ২০ বছরের আগে ও পরে, ত্রিশের কোটায় পৌঁছেও জালে খুঁজে পেয়েছেন।
৯<> বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৯টি ম্যাচে সেরার পুরস্কার উঠেছে মেসির হাতে। ৭ ম্যাচে সেরা হয়ে দুইয়ে পর্তুগিজ মহাতারকা রোনালদো। যেকোনো টুর্নামেন্টে সেরার তালিকায়ও আছেন মেসি। ওয়েসলি স্নেইডারের সঙ্গে যে রেকর্ড ভাগাভাগি করে আছেন লিও।
৫<> পাঁচ বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৬ জনের ছোট্ট তালিকায় আছেন মেসি। ১৯৬৬ সালের পর কোনো বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে গোল করার তালিকায় একাই আছেন লিও।
৭<> সাতবার ব্যালন ডি’অর জেতা প্রথম এবং একমাত্র ফুটবলার মেসি। ইউরোপিয়ান ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৬টি গোল্ডেন বুটও তার দখলে। জাতীয় দল এবং ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে ৫৬টি হ্যাটট্রিকও তার দখলে আছে।
ক্লাব ফুটবলেও ভুরিভুরি রেকর্ড আছে লিওনেল মেসির। ৩৫ বছর বয়সে এসেও দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে চলছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ১৮ ডিসেম্বর লুসেইলে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় অর্জনের লড়াইয়ে নামবেন। হয়ত সমাধান করে দেবেন ‘কে সেরা’ বিতর্কেরও।