এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটাতে এবং লাখ লাখ তরুণ অভিবাসীর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ বা সিনেটে পুনরায় উত্থাপন করা হয়েছে ‘ড্রিম অ্যাক্ট ২০২৫’। এই দ্বিপাক্ষিক বিলটি পাস হলে আমেরিকায় বসবাসরত অনিবন্ধিত তরুণ-তরুণী এবং বৈধ ভিসায় (যেমন এইচ-১বি, এল-১) থাকা অভিভাবকদের সন্তানদের জন্য গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্বের পথ সুগম হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজের জন্য, বিশেষ করে যারা সপরিবারে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা বা চাকরিতে নিয়োজিত, তাদের জন্য এই বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বিলে কী আছে?
সিনেটর ডিক ডারবিন এবং সিনেটর লিসা মারকাওস্কি যৌথভাবে এই বিলটি উত্থাপন করেছেন। বিলটির মূল লক্ষ্য হলো, যারা শিশু হিসেবে আমেরিকায় এসেছিল এবং এখানেই বড় হয়েছে, তাদের আইনি সুরক্ষা দেওয়া।
আইনটি মূলত দুই ধরনের অভিবাসীদের সুরক্ষা দেবে:
১. ড্রিমার বা স্বপ্নচারী: যারা ছোটবেলায় মা-বাবার সাথে আমেরিকায় এসেছে কিন্তু তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই।
২. নথিবদ্ধ ড্রিমার (ডকুমেন্টেড ড্রিমার্স): যারা বৈধ ভিসায় (যেমন এইচ-১বি, ই-১, ই-২, এল ভিসা) মা-বাবার সাথে আমেরিকায় এসেছে, কিন্তু ২১ বছর বয়স হওয়ার কারণে তাদের ‘নির্ভরশীল’ বা ‘ডিপেন্ডেন্ট’ মর্যাদা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
‘নথিবদ্ধ ড্রিমার’ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ অনেক বাংলাদেশি পেশাজীবী ও পিএইচডি গবেষক আমেরিকায় এইচ-১বি বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসায় পরিবারসহ বসবাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নিয়মে, অভিবাসীদের সন্তানদের বয়স ২১ বছর পূর্ণ হলে তারা আর মা-বাবার ভিসার অধীনে থাকতে পারেন না। একে বলা হয় ‘বয়স পেরিয়ে যাওয়া’ বা ‘এজিং আউট’।
এর ফলে, যে সন্তানটি আমেরিকায় বড় হয়েছে এবং এখানকার স্কুলে পড়েছে, ২১ বছর বয়সে তাকে হঠাৎ করে নিজের ভিসার ধরন পরিবর্তন করতে হয় (যেমন ছাত্র ভিসায় যাওয়া) অথবা আমেরিকা ছেড়ে চলে যেতে হয়। গ্রিন কার্ড পাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে অনেক সন্তান মা-বাবার গ্রিন কার্ড হওয়ার আগেই ২১ বছর পার করে ফেলে।
ড্রিম অ্যাক্ট ২০২৫ পাস হলে:
-
এই সন্তানেরা ২১ বছর পার হলেও আইনি সুরক্ষা পাবে।
-
তারা মা-বাবার গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষা না করেই নিজস্বভাবে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারবে।
গ্রিন কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া বা রূপরেখা প্রস্তাবিত বিলে যোগ্য প্রার্থীদের জন্য নাগরিকত্বের একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে:
১. শর্তসাপেক্ষ স্থায়ী বসবাস: যোগ্য প্রার্থীরা প্রথমে ৮ বছরের জন্য শর্তসাপেক্ষ গ্রিন কার্ড পাবেন। এই সময়ে তারা বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভ্রমণ করতে পারবেন।
২. স্থায়ী গ্রিন কার্ড: শর্তসাপেক্ষ সময়ের পর, তারা স্থায়ী গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন যদি তারা নিচের যেকোনো একটি শর্ত পূরণ করেন:
-
আমেরিকার কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন।
-
অন্তত ২ বছর সামরিক বাহিনীতে সম্মানজনক সেবা প্রদান।
-
অন্তত ৩ বছর কর্মসংস্থানে নিযুক্ত থাকা।
কারা আবেদনের যোগ্য হবেন? বিলটি পাস হলে আবেদনের জন্য নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
-
যিনি শিশু হিসেবে (১৮ বছরের কম বয়সে) যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন।
-
বিলটি পাস হওয়ার আগের ৪ বছর একটানা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন।
-
আমেরিকার হাই স্কুল ডিপ্লোমা বা সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন অথবা বর্তমানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি আছেন।
-
ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
-
নিরাপত্তা ছাড়পত্র বা ব্যাকগ্রাউন্ড চেকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
যদিও এটি এখনো একটি ‘বিল’ বা খসড়া আইন এবং এটি পাস হতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন, তবুও ড্রিম অ্যাক্ট ২০২৫ প্রবাসী সমাজের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে যে বাংলাদেশি পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির খবর হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দলের সিনেটররা মিলে এটি উত্থাপন করায় এর পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমেরিকার অভিবাসন ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।








