ভারতে থাকা বিবিসির অফিসগুলোতে রাতভর তল্লাশির পরে দিনে আবারও সেখানে গিয়েছে কেন্দ্রীয় আয়কর দফতরের আরও কর্মকর্তা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় এ অভিযান শুরু হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও সেখানে অবস্থান করছে আয়কর দফতরের কর্মকর্তারা, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন ‘এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া’। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
তল্লাশিতে কী পাওয়া গেল বা কেন এই তল্লাশি, তা নিয়ে আগ্রহভরে বিবিসি অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। খবরে প্রকাশ, অফিসে ঢুকেই বিবিসির সমস্ত সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ জমা করতে বলেন আয়কর কর্মকর্তারা। আয়কর কর কর্তৃপক্ষ অননুমোদিত কর সুবিধা, কর ফাঁকিসহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে ২০১২ সাল থেকে বিবিসির পুরো হিসেব নিকেশ মিলিয়ে দেখছে।
তল্লাশি চলাকালে ভারতের বিবিসি অফিসের সবাইকে ইমেল করে তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছে বিবিসি কর্তৃপক্ষ। এদিকে সম্প্রচার বিভাগ ছাড়া বাকি সব কর্মীকেই বাড়ি থেকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সমালোচনামূলক একটি তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরেই বিবিসির নয়া দিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে এই তল্লাশির ঘটনা ঘটলো।
গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা ঘিরে ওই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। সেসময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি কীভাবে রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং ভারতীয় জনতা পার্টিতে কীভাবে ক্রমান্বয়ে শীর্ষে উঠে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিবিসির সংগ্রহ করা একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন সেখানে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ধর্মীয় দাঙ্গা চলার সময় নরেন্দ্র মোদির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি রেলে আগুন লাগানোর পর অনেক মানুষ হতাহত হলে ওই দাঙ্গা শুরু হয়। এরপরের কয়েকদিনের সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগ ছিলেন মুসলমান।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নরেন্দ্র মোদি সেই সময় সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছিল।
তখনকার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্রর নির্দেশে করা একটি তদন্তের অংশ হিসাবে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, ‘সহিংসতা মাত্রা প্রকাশিত খবরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল’ এবং ‘দাঙ্গার লক্ষ্য ছিল হিন্দু এলাকাগুলো থেকে মুসলমানদের নির্মূল করা’।
নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। এই দাঙ্গার জন্য মোদি কখনো ক্ষমা চাননি এমনকি ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেলও বলেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর বিজেপি নেতারা বিবিসির উপর ক্ষিপ্ত হন এবং ভারতে বিবিসির সম্প্রচার বন্ধের জন্য আদালতে আবেদন করেন কিন্তু আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয়।
এর পরেই আয়কর দফতরের কর্মকর্তারা বিবিসির ভারতের অফিসগুলোতে অভিযানের যোগসূত্র মেলাচ্ছেন বিভিন্ন মহল।