কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রথম বায়োগ্রাফিক্যাল ডকুমেন্টারি। ৯০ মিনিট ব্যাপ্তির এই প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’। যা নির্মাণ করেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। এ উপলক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) বিকাল চারটায় চ্যানেল আই ভবনে আয়োজন করা হয় সংবাদ সমাবেশ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাকের পুরো পরিবার।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জলজলে একটি তারার নাম নায়করাজ রাজ্জাক! বাংলা চলচ্চিত্র যতোদিন টিকে থাকবে, এই নামটিও কারো মুছে দেয়ার সাধ্যি নেই। তার জীবন ও ক্যারিয়ারের নানা গল্পে বুনন করা হয়েছে ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’-এ। সংবাদ সমাবেশ উপলক্ষ্যে এদিন চ্যানেল আইয়ের তিন নাম্বার স্টুডিও পুরো রঙিন সাজে! উঁকি দিতেই দেখা গেল বিশাল বিশাল ডিজিটাল ব্যানারে নানা ঢঙে আবির্ভূত নায়করাজ। পুরনো আমেজ ফিরিয়ে আনতে রিক্সা পেইন্টিংয়ের আদল দেয়া হয়েছে। তরুণ বয়স থেকে বিভিন্ন ঢঙের ছবিতে মূর্ত হয়ে আছেন নায়করাজ। পুরো পরিবেশটায় যেনো রাজ্জাকময়!
এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই চ্যানেল আই ভবনে এসে উপস্থিত হন নায়করাজ রাজ্জাকের স্ত্রী খায়রুন্নেসা লক্ষ্মী। এসময় সঙ্গে ছিলেন বড় ছেলে নায়ক বাপ্পারাজ ও ছোট ছেলে সম্রাট। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’-এর নির্মাতা শাইখ সিরাজ। ধীরে ধীরে আসতে থাকেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের আরো আরো অতিথিরা।
আসেন নায়করাজ রাজ্জাকের সমকালীন অভিনেতা, অভিনেত্রী, নির্মাতা, চিত্রসমালোচক, কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ,নির্মাতা আমজাদ হোসেন, সুরকার গীতিকার ও চিত্রপরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা ফারুক, অভিনেত্রী সুজাতা আজিম, সৈয়দ আব্দুল হাদী,আলাউদ্দিন আলী, খুরশীদ আলম, চিত্রসমালোচক শফিউজ্জামান খান লোদী, চিত্রসাংবাদিক আব্দুর রহমান, বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী, শহীদুল আলম সাচ্চু, অভিনেতা মিশা সওদাগর, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী। ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’-এর সংবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন আদিত্য শাহীন।
আগামী ২১ আগস্ট ঢাকার সিনেমার প্রাণপুরুষ রাজ্জাকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ১৭ আগস্ট শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চ্যানেল আইতে প্রচার হবে শাইখ সিরাজের ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ নামের এই চিত্রগাথা। তার আগের দিন বিকালে চ্যানেল আই ভবনে প্রামাণ্যচিত্রটির সংক্ষিপ্ত রূপ(২৭ মিনিট) দেখানো হয় আগত অতিথিদের।
তার আগে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ নিয়ে কথা বলেন ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির জন্য শাইখ সিরাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নায়করাজ রাজ্জাক সবার প্রিয় ছিলেন। তিনি সবার মনে জায়গা করে আছেন। চ্যানেল আইয়ের যে স্টুডিওতে আমরা বসে আছি তিনি এখানেও প্রচুর অনুষ্ঠান করেছেন। আমাদের সবার সাথে তার অনেক স্মৃতি রয়েছে, অনেক কথা রয়েছে। তার অনেক কিছুই শাইখ সিরাজ তার প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরেছেন। এজন্য তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।
নায়ক রাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আরো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে চ্যানেল আই। এমন সুখবরের আভাস দিয়ে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, নায়করাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবার ঈদে আমরা তার অভিনীত ‘ময়নামতি’র ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এই ছবিটি মুক্তির পর কোথাও দেখানো হয়নি। কাজী জহিরের পরিবারের সৌজন্যে পেয়েছি। এই ছবির প্রিন্টও খুব ভালো ছিলো না। আমরা মাদ্রাজ পাঠিয়েছি, যেনো একেবারে ঝকঝক প্রিন্ট আসে।
এরপর সবার প্রিয় নায়কের উপর জীবনী নির্ভর প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের নির্মাণের কারণ জানালেন শাইখ সিরাজ। মাইক্রোফোন হাতে তিনি বললেন, আমরা যারা এখন মাঝ বয়সী তাদেরকে ষাট বা সত্তরের দশকের পর্দার নায়কেরা কোনো না কোনো ভাবে প্রভাব ফেলেছে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। প্রভাব ফেলেছিলো বলেই পরিণত বয়সে এসে যখন নিজেরা এসে টেলিভিশন, মিডিয়া বা নির্মাণের সাথে যুক্ত হলাম তখন রাজ্জাক সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ হলো। ছোটবেলায় চলচ্চিত্রে যে রাজ্জাককে দেখেছি তার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার পর মনে হলো তাকে নিয়ে এমন জীবনী নির্ভর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা যায়। ভাবনার সেই শুরু। যা শেষ হলো ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ দিয়ে। এরজন্য আমি আমার পুরো টিমের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কথায় কথায় শাইখ সিরাজ তুলে ধরেন ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ নির্মাণ করতে যেয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হন তারও। বললেন কিংবদন্তি এই নায়ককের জীবনী নিয়ে এরকম কাজ ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবেও ফিল্ম স্কুলগুলোর কাজে লাগতে পারে।
শাইখ সিরাজের বক্তব্যের পর আগত অতিথিদের দেখানো হয় ২৭ মিনিটের ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’-এর সংক্ষিপ্ত ভার্সনটি। যা দেখার পর উপস্থিত অনেককে আবেগাপ্লুত দেখা যায়। বিশেষ করে তার পরিবারের সদস্যরা, তার সমকালীন সময়ের নির্মাতা ও সংগীতের মানুষজন। নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে এমন অসাধারণ কাজ করার জন্য সকলেই শাইখ সিরাজকে ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞতা জানান চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন। তিনি শাইখ সিরাজকে বাহবা দিয়ে বলেন, যে কাজটি চলচ্চিত্রের মানুষের উদ্যোগ নিয়ে নির্মাণ করার কথা ছিলো তা আপনি করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
শাইখ সিরাজের ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ নির্মাণকে কেন্দ্র করে উপস্থিত অনেকেই তখন তাদের বক্তব্যে বলেন, পর্যায়ক্রমে বাংলা চলচ্চিত্রে আরো যারা প্রবীন মানুষ রয়েছেন তাদের জীবন ও ক্যারিয়ার যেন এভাবে প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। অনেকে তখন সংবাদ সমাবেশে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ্য করে সরকারি ভাবে এমন জীবনী নির্ভর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অনুরোধ জানান।
সবশেষে ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’-এর মুক্তি উপলক্ষ্যে কেক কাটেন রাজ্জাকের স্ত্রী লক্ষ্মী ও তার পরিবার। আসছে ২১ আগস্ট বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রামাণ্যচিত্রটি।
ছবি: সাকিব উল ইসলাম