বয়স ৩২ বছর। দেখতে হুবহু শিশুর মত। তিনি কুড়িগ্রামের আছর উদ্দিন। তার উচ্চতা প্রায় ৪০ ইঞ্চি। তিনি শিশুসুলভ আচরণে সারাদিন খেলাধুলাও করছেন গ্রামের অন্যান্য শিশুদের সাথে।
দরিদ্র বাবা-মা তার দেখাশোনা করলেও আছর উদ্দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে জন্মগত ত্রুটির কারণে এমন রোগে আক্রান্ত মানুষের ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির বাইরে খেলাধুলায় মত্ত থাকা শিশুদের দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী আছর উদ্দিন ওরফে ছমির। একমনে খেলাধুলা করছেন শিশুদের সাথে। আবার কখনও বাবার হাত ধরে যাচ্ছেন বাজার বা অন্য কোথাও। এছাড়াও বাড়ির পাশের দোকানে যাচ্ছেন শিশুদের মতোই কিছু কিনে খাবেন বলে।
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের চেয়ারম্যান পাড়ার মো. আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে আছর উদ্দিন। তিনি এখনও শিশুর মতো জীবন যাপন করলেও তার ছোট ভাই বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
আছর উদ্দিনের বাবা-মা জানায়, জন্মের পর থেকেই ছমির অস্বাভাবিক। বয়স হলেও শিশুর মতোই লালন-পালন করছেন তাকে। ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে দেখিয়েছেন চিকিৎসক। তারপরও শরীরে নানা সমস্যা নিয়ে শিশুই থেকে গেছেন আছর উদ্দিন। নিজেদের অবর্তমানে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত তারা।
অপর দিকে গ্রামের অন্যান্য শিশুরাও আছর উদ্দিনকে শিশু মনে করে স্বাচ্ছন্দে খেলাধুলা করে তার সাথে। আর স্থানীয়রা জানান, আছর উদ্দিনের সমবয়সীরা বিয়ে করে ঘর-সংসার করছে।
৩২ বছর বয়সী আছর উদ্দিনের ওরফে ছমিরের খেলার সাথী ৮ বছর বয়সী শিশু সিনথিয়া আক্তার বলে, তিনি আমার চাচা হন। আমরা একসাথে সবসময় খেলি। ছমির চাচা কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না। তিনি খুব ভালো মানুষ।
৩২ বছরের ছমিরের মা আছিয়া বেগম বলেন, যখন আমার ছেলের ২ বছর বয়স তখন বুঝতে পারি, আমার ছেলের শারীরিক সমস্যা আছে। পরে তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে অনেক ডাক্তার কবিরাজকে দেখিয়েছি। ডাক্তার আমাকে বলেছে আপনার ছেলে স্বাভাবিক হবে না। তারপরেও তাকে মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। এখন তো তার বয়স অনেক হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি। এখন তার ঘাড়ের সমস্যা, পেটের সমস্যা, আরও অনেক শারীরিক সমস্যা আছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, মায়ের গর্ভাবস্থায় ত্রুটি জনিত কারণে এমন খর্বাকৃতির সন্তানের জন্ম হয়। এজন্য সন্তান গর্ভে থাকার সময় নিয়মিত চেকআপ আয়োডিন ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পরামর্শ এই চিকিৎসকের।
তিনি আরও বলেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আছর উদ্দিনকে কিছুটা হলেও সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এই দরিদ্র দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে আছর উদ্দিন দ্বিতীয় এবং ছেলের মধ্যে বড়। ১৯৯২ সালে ২৪ মে জন্ম হয় আছর উদ্দিনের।