গ্রামপুলিশের মহল্লাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেডে এবং দফাদারদের ১৯তম গ্রেডে বেতন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত নিরহংকারী কর্মচারীর প্রতীক গ্রামপুলিশ।’
সারাদেশের ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ সদস্যের ভাগ্য বদলের ঐতিহাসিক রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়ে গ্রামপুলিশের মহল্লাদারদের জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ এর (বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) ২০তম গ্রেডে বেতন ভাতা প্রদান এবং দফাদারগণকে ১৯তম গ্রেডে বেতন ভাতা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর ২০১১ সালের ২ জুনের পর হতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা-২০১১ বহির্ভূতভাবে মহল্লাদার ও দফাদারের যেকোনো নিয়োগ অবৈধ ও বেআইনি মর্মে গণ্য হবে রায়ে বলে দেয়া হয়েছে।
প্রকাশিত এই রায়ের হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সাধারন মানুষের সবচেয়ে নিকটতম ও আপন আত্মীয়ের মত প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়ােজিত কর্মচারীগণ হলাে মহল্লাদার এবং দফাদারগণ। যে কোন বিপদে-আপদে, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাংলার সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে সবচেয়ে কাছের সরকারী কর্মচারীটি হল মহল্লাদার এবং দফাদারগণ। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কাকে বলে, তা এরা জানে না। এরা সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েও জনগণকে বেশী সেবা প্রদানকারী সরকারী কর্মচারী। প্রজাতন্ত্রের সহজ, সরল ও নিরহংকারী কর্মচারীর প্রতীক হচ্ছেন গ্রামপুলিশের এই দফাদার ও মহল্লাদারগণ।’
এই রায়ের বিষয়ে গ্রামপুলিশদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবির পল্লব চ্যানেল আই অনলাইকে বলেন: ‘গ্রাম পুলিশের দফাদারেরা মাত্র ৭ হাজার ও মহল্লাদাররা সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন ভাতা পান। এতে করে বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের জীবন জাপন খুবই কষ্টের। তবে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে দেশের ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ সদস্যের জীবন মান পাল্টে যাবে বলে আশা করছি।’
এর আগে ২০০৮ সালে গ্রাম পুলিশের সদস্যদের জাতীয় বেতন স্কেলের চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পরে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৭ সালে ৩৫৫ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য হাইকোর্টে একটি রিট করেন।
সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। রুলে ২০০৮ সালের সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। এরপর এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পূর্ণাঙ্গ সে রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনকারী গ্রামপুলিশদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির, মো. মোজম্মেল হক, মোহাম্মদ কাওসার, মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের ও নূর আলম সিদ্দিকী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা, শায়রা ফিরোজ ও মাহফুজুর রহমান লিখন।