বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে অগ্নিকাণ্ড অন্যতম। অগ্নিকাণ্ডের ফলে অল্পসময়ের মধ্যে নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায় সম্পদ, ঘটে প্রাণহানি। দেশে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। এই সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ঘটে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা।
তবে অগ্নিকাণ্ড যখন কোনও জনবহুল এলাকা বা শিল্প-কারখানাতে ঘটে, তখনই আগুনের ভয়াবহতা আমাদেরকে নাড়া দেয়, কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকার চকবাজারস্থ চুড়িহাট্টা, মিরপুরস্থ ভাষানটেক, ডিএনসিসি কাঁচা বাজার ও সুপার মার্কেট, গুলশান-২, খিলগাঁও কাঁচাবাজার, মিরপুরস্থ সিটি পার্ক ভবনের অগ্নিকাণ্ড, বিশেষ করে বনানীর এফ আর টাওয়ারের ঘটনা পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে শুধুমাত্র চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ৭২ জন এবং বনানীর এফআর টাওয়ারে ২৮ জন।
গ্রীষ্মকাল শেষ হয়ে বর্তমানে শীতের শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়েছে, আর শীতের শুরুতেই রাজধানীর টিকাটুলিতে রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ আগুনসহ টঙ্গী ও ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আজও কাওরান বাজারে অবস্থিত পেট্রোবাংলা হেড অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেইসঙ্গে কুর্মিটোলা ও কাওরান বাজারে যাত্রীবাহী বাসে আগুন লেগেছে।
এসব দুর্ঘটনায় দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসাধ্য সীমিত অবস্থায় থাকে বলে আমরা মনে করি। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্য। প্রতিটি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়, তার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও জরুরি নির্গমন বিষয়ে জ্ঞান না থাকা, দাহ্য ও বিস্ফোরক পদার্থের অনুমোদনহীন গুদামজাতকরণ। এছাড়া শহর ও গ্রামে রান্নার পর আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে না দিলে, বাতাসে উড়ে গিয়ে সেই আগুন বাড়ির বেড়ায় লাগতে পারে; ছাইয়ের আগুন বাতাসে উড়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে; চুলার উপর খড়ি শুকাতে দিলে খড়িতে আগুন লেগে যেতে পারে, সে আগুন বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে; সিগারেট, বিড়ি ও হুঁকার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে বিভিন্ন তদন্তে প্রমাণিত।
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতায় রয়েছে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ। তবে শুধুমাত্র তাদের উপরে ভরসা না করে অগ্নিকাণ্ডের উপরোক্ত কারণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখে বুঝে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই আরেকটি সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে পারে জানমাল।