আত্মহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ- এ শব্দগুলো সমাজের ব্যাধি। যা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না নারীরা। সংবাদমাধ্যমে নারী নির্যাতনের খবর থাকবে না এ প্রত্যাশাটা অমূলক হয়ে যায়, যখন রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মত মেয়েদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দৃশ্য ও সংবাদ প্রকাশ হয়।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রুম্পার মৃত্যুর অন্তরালের ঘটনা এখনো রহস্যময়।
তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য। রুম্পার শারীরিক চিহ্নগুলো থেকে একে হত্যা বা আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও ধর্ষণ বিষয়টি পরিষ্কার নয়৷ তাছাড়া রুম্পার মৃত্যুর পূর্বের কার্যকলাপ আরও জটিলতার জন্ম দিয়েছে।
এদেশে অনেক ঘটনার বিচার হয়নি। যার কারণ হলো প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত না করে ধামাচাপার চেষ্টা । আর এ সত্যতা গোপন করা হয় রাজনৈতিক চাপ, প্রশাসনিক দূর্বলতা,আইনগত, বিচারিকসহ পারিবারিক সামাজিক নানা ধরনের জটিলতার কারণে।
নুসরাত হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, এদেশের প্রশাসন পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে অন্যায়ের বিচার পাওয়া যায় তড়িৎ গতিতে। কিন্তু সত্যকে আড়াল করার কারণে বিচার পায়নি তনু। আর রুম্পার ঘটনাটি নিয়ে প্রথম থেকেই এক ধরনের ধুম্রজালের আভাস দেখা দিয়েছে। তাই রুম্পার পরিবার সহপাঠিদের মনের সংশয় থেকে প্রশ্ন আসে রুম্পা কি ধর্ষণের শিকার?
সময়ের ব্যবধানে আইনগত কঠোর বিধান হলেও ,এ সমাজে নারীদের প্রতি শারীরিক, মানসিক নির্যাতন কমছে না। খবরের পাতায় সব হয়ত খবর হয়ে আসে না। পারিবারিক বা সামাজিক ভাবে নির্যাতনের বিষয় ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের মান সম্মান রক্ষা করা হয়। কিন্তু এতে যে বিবেকের দংশন হয় তা কেবল বুঝে একজন নির্যাতিত নারীই।
তনু হত্যার বিচার হবার আশা করাটা বিফল। এর কারণ একটি বিশেষ পেশার ব্যক্তি ঘটনাটির সাথে জড়িত। আর তনুকে ন্যায় বিচার দিতে হলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে দেশের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটি। তার চেয়ে তনুকে নিয়ে নিরব থাকাকে শ্রেয় মনে করে দেশ ও সরকার।
রুম্পার বেলায় আত্মহনন, হত্যা,ধর্ষন যেটাই ঘটুক তার আগে সচেতন মানুষ হিসেবে জানা প্রয়োজন, কেন এমন মৃত্যু? হত্যার প্রতিবাদ, সমাবেশ করে বিচার পাবার প্রত্যাশা ক্ষীণ। কারণ আইনি প্রক্রিয়াতে সুষ্ঠু তদন্ত হলো মুখ্য বিষয়। তাই বিচারিক প্রক্রিয়াতে রুম্পার মৃত্যুর রহস্যের সত্য উন্মোচন হোক এটাই প্রত্যাশা সবার।
নারী সমাজকে একজন নারী হিসাবে কেবল নয় বরং ‘মানুষ আমি’ এ চিন্তা থেকেই মানবিক বোধের উত্তরনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। রুম্পা যদি কোনো আবেগী কারণে আত্মহত্যা করে সে সত্যও প্রকাশিত হতে হবে। কেননা জীবনের চলার পথে শুধু একটা মানুষকে ঘিরে জীবন নয়। তাই আত্মহত্যা ভুল পথ। আবার প্রতিশোধ বা সম্পর্ক ছিন্ন করতে কেউ তাকে হত্যা, ধর্ষণ করলে তার বিচার হতে হবে৷
অন্যায়ের বিচার না হলে সমাজে অপরাধী আরও বেশী সাহসী হয়। দেশে নারীদের ধর্ষণ হত্যা কমছে না আইনী প্রক্রিয়ার সঠিক প্রয়োগ ও বিলন্বিত বিচারের কারণে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সমাজের ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় না। তাই তনু রুম্পারা খবরের পাতায় বারবার খবর হয়ে আসে৷ আর কন্যা জায়া জননীদের অসহায়ত্ব রাস্তায় প্লেকার্ড হয়ে বিচার চায় এক একটি মৃত্যুর পর।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)