শান্তি চুক্তির কারণে পাহাড়ে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন: শান্তি চুক্তির পর সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন থমকে গিয়েছিল, তবে ২০০৯ সাল থেকে আবারও সেই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: দীর্ঘদিন এই অঞ্চল অবহেলিত থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়েও এখানে উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এখানে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির দু’দশক পূর্তি অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
পার্বত্য জেলাসমূহের জনগণ ও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শান্তি চুক্তি হয়েছে, যেমন: ফিলিপাইন, আয়ারল্যান্ড। কিন্তু কোন দেশেই কেউ অস্ত্র জমা দেয়নি। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চু্ক্তিতে আমরা অস্ত্র জমা নিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দু:খের ব্যাপার সেদিন বিএনপি হরতাল ডেকে শান্তি চুক্তিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এমনকি তারা ভারতীয় পতাকা বানিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝাতে চেয়েছিলো। তারা বলেছিলো, শান্তি চুক্তি হলে নাকি ফেনী পর্যন্ত দেশ ভারতের হয়ে যাবে। তারা শান্তি চুক্তি নিয়ে কখনো আন্তুরিক ছিলো না।’
তিনি বলেন: আমরা যা করবো সংবিধান অনুযায়ী করবো। সংবিধানের বাইরে কিছুই হবে না। আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকার উন্নয়নের জন্য সংসদ উপ-নেতাকে প্রধান করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এমনকি আমরা চুক্তি অনুযায়ী প্রায় সবগুলো বিষয় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জায়গা থেকেও সেনা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমাদের সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করেছি। এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য , বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকলখাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি।
ভূমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন: বোর্ডের কার্যক্রম আরো গতিশীল ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৪ প্রণয়ন করেছে। পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটন শিল্পের প্রসারেও নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নানামুখি কার্ক্রম হাতে নিয়েছি। প্রায় দু’দশক ধরে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার রাস্তাঘাট উন্নত হতে শুরু করেছে। আামাদের সরকার জাতি ধর্ম নির্বিশেষে উন্নয়েনের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ে তুলতে চাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া বিবর্জিত পশ্চাদপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: তাদের মানোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের সম-সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা নেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমি আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। তিনি পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এসময় দেশের উন্নয়নে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে পার্বত্য তিন জেলার মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে দেশের উন্নত, সুখী, সু্ন্দর জীবন পালন করতে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।