২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিলো সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা। আগের দিন আলোচিত ঐ ভবনটির পলেস্তারা খসে পড়লেও শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ফলে ঘটে যায় শিল্প ইতিহাসে তৃতীয় ভয়াবহতম এবং গার্মেন্টস শিল্পে ভয়াবহতম ট্র্যাজেডি।
রানা প্লাজার তিন তলা থেকে নয়তলা পর্যন্ত ৫টি পোশাক কারখানা ছিলো। তিন তলায় ছিলো নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড। মূলত: এখান থেকেই ট্র্যাজেডির শুরু। এই কারখানাটিতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য শিশুদের প্যান্ট তৈরি হচ্ছিলো।
এপ্রিল ২৩:
সকাল পৌণে ১০টা:
ভবনটির তিন তলার একটি পিলার থেকে সেলাই মেশিনের উপর কিছু পলেস্তারা খসে পড়ে, অনেক শব্দ ছিলো বলে শ্রমিকরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। সশব্দে পিলারে ফাটল তৈরির কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রথমে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও পরে তা বাতিল করে।
সাড়ে ১২টা:
এর মধ্যে সাংবাদিকরা সেখানে ছুটে গেলে ভবনটির মালিক সোহেল রানা বলেন, পিলার থেকে চুল পরিমাণ প্লাস্টার খুলে পড়েছে। তিলকে তাল বানাচ্ছে মানুষ। আমরা ইঞ্জিনিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে দেখে এসেছি। ইঞ্জিনিয়ার ‘এটা ঝুঁকিপূর্ণ না’ বলে জানিয়েছেন বলে দাবি করেন সোহেল রানা।
তিনি আরো বলেন, দু’য়েক দিনের মধ্যে প্লাস্টার ঠিক করে ফেলা হবে। তবে সোহেল রানা যে ইঞ্জিনিয়ারের কথা উল্লেখ করেন তিনি কোনো কর্তৃপক্ষ না। তিনি সোহেল রানারই নিয়োগ করা একজন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক খান। সোহেল রানার সঙ্গে তিনিও রানা প্লাজা ধস মামলার আসামী।
বেলা ৩টা:
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কবির হোসেন সরদার রানা প্লাজা পরিদর্শন করে সোহেল রানার প্রকৌশলীর বরাত দিয়ে জানান, তেমন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। একটা পিলারে সামান্য ফাটল, বিশাল আশংকার কিছু নেই।
তবে কাজ-কর্ম বন্ধ রাখতে বলে শিল্প পুলিশ।
এপ্রিল ২৪:
সকাল ৮টা:
শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছিলো। তাই রানা প্লাজার ভেতরে কারখানায় কাজ শুরু করতে অনিচ্ছা ছিলো অনেক শ্রমিকের। ভবনটির শপিং মলের সব দোকান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় ভবনের সামনে শুধু ৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা ছিলেন। তাদের ভবনে ঢুকতে ইচ্ছা না থাকায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে কাজে যোগ দিতে বলা হয়।
সাড়ে ৮টা:
তিন তলা থেকে নয়-তলা পর্যন্ত কারখানাগুলোর সবগুলো ফ্লোরেই কাজ শুরু হয়ে যায়। ফ্লোরে ফ্লোরে মাইকিং করে বলা হয়, ভবনটি ১৩ তলা ফাউন্ডেশন, মাত্র ৯ তলা হয়েছে। আতঙ্কিত হবেন না। দুর্ঘটনা কিছু ঘটলেও কমপ্লায়েন্সের লোকজন সবাইকে দ্রুত বের করে নিয়ে যাবে।
৮টা ৪০:
এমন ঘোষণার মধ্যেই আতঙ্কিত কিছু শ্রমিক ছোটাছুটি শুরু করে। বেরও হয়ে যায় কয়েকজন।
৮টা ৪৭:
কয়েক হাজার শ্রমিকসহ ধসে পড়ে রানা প্লাজা। ঘটে যায় শিল্প ইতিহাসে তৃতীয় ভয়াবহতম এবং গার্মেন্টস শিল্পে ভয়াবহতম ট্র্যাজেডি।
এই ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১ হাজার ১শ’ ৩৫ জন তৈরি পোশাক কর্মীর। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪শ’ ৩৮ জনকে।