রূপকথার গল্পের মতো আলাউদ্দিনের জাদুর চেরাগ হাতে পেয়েছিল মো. গোলাম ফারুক। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ফারুক চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্ত্রী আফরোজা আক্তারকে নিয়ে কাজের সন্ধানে ২০০৯ সালে শূন্য হাতে গাজীপুরে আসেন।
পরে একটি অপরাধী চক্রের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে জড়িয়ে পড়েন অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়। কয়েক বছরেই শূন্য হাতে ঢাকায় আসা গোলাম ফারুক দম্পতি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান।
এসব অভিযোগের কারণে ২০০৯ সাল থেকে ফারুকের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও মানিলন্ডারিং আইনে ৮ টি মামলা হয়। এসব মামলার ভিত্তিতে সোমবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে ফারুক ও তার স্ত্রী আফরোজা আক্তার এ্যানীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি মাদকের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টো, তার বড় ভাই, ভাগ্নে এবং বিকাশ এজেন্টসহ ১৭ জনের নামে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট টেকনাফ থানায় একটি মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলায় গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফারুকের বিষয়ে তিনি বলেন, গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রী এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি গ্রামে থাকতেন। তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী ২০০৯ সালে শূন্য হাতে ঢাকায় আসেন। পরে ঢাকার গাজীপুরে একটি অপরাধী চক্রের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়।
সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা অস্ত্র ব্যবসা শুরু করেন। এর পাশাপাশি তারা একটি গার্মেন্টস ব্যবসা খুলে বসেন। এর কিছুদিন পর তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
তারা প্রথমে টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোর চাচা গুড়া মিয়ার কাছ থেকে ইয়াবা এনে ব্যবসা করতেন। পরে এই গোলাম ফারুক নুরুল হক ভুট্টো এবং তার বড় ভাই নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে ইয়াবা এনে ব্যবসা করতে থাকেন। ইয়াবার টাকায় গোলাম ফারুক একপর্যায়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান।
গোলাম ফারুক মাদকের টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তিনি এলেজা ইক্সেপাের্ট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি মেশিনারী ফ্যাক্টরী গড়ে তোলেন। যাতে তার প্রায় এক কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। এছাড়াও তার এবং স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে অনেক টাকা সে রেখেছে।
আবার এই টাকা দিয়ে তারা স্বামী স্ত্রী বাড়ি, জমি, মাইক্রোবাস কিনেছে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি ফারুকের নামে ডিএমপির তেজগাঁও, উত্তরা পুর্ব থানা, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর থানা এবং একই জেলার শিবগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় আটটি মাদকের মামলা রয়েছে।
তদন্তকালে তাদের শত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যা শিগগির বাজেয়াপ্ত করে সরকারী কোষাগারে জমা করার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান মোল্লা নজরুল।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তারের আগে মাদকের গডফাদার নুরুল হক ভুট্টোর সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের সূত্র ধরে মিরপুর থেকে আরেক মাদক ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন ইমন, তার স্ত্রী সানিয়া আফরোজ ও ছেলে সালাউদ্দিন প্রিন্সকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে নুরুলের বড় ভাই নুর মোহাম্মদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের সূত্র ধরে মিরপুর বিহারী ক্যাম্পের মাদক সম্রাজ্ঞী রুপা ইসলাম, তার স্বামী আল আমিন, সহযোগী রিয়াজ, ফয়সাল এবং বিকাশের এজেন্ট জনি ও কুদ্দুসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
পর্যায়ক্রমে নরসিংদী থেকে মাদকের ডিলার রায়হান, আসাদুজ্জামান, স্বপন, কেরানীগঞ্জের বিকাশ এজেন্ট আব্বাস, টঙ্গীর মাদক সম্রাজ্ঞী রানী, তার সহযোগী নাইম, ইব্রাহিম, বিকাশ এজেন্ট শাহজালাল, নাসির উদ্দিন সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও নুরুল হক ভুট্টোর সাথে অর্থনেতিক লেনদেনের সূত্র ধরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মুসা মিয়া, জয়পুরহাটের আবুল হােসেনকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ এই মামলায় গোলাম ফারুক এবং তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।