ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য। কোনো মাফিয়া গ্রুপের হামলার ঘটনা। আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় দিনে দুপুরে ফিল্মি কায়দায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে।
ডাকাতদের গুলিতে ব্যাংক ম্যানেজারসহ ঘটনা স্থলে ৫ জন এবং পরে হাসপাতালে ২ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৪ জন। ঘটনার পর পরই গণপিটুনিতে এক ডাকাতের মৃত্যু হয়।
দুপুরের খাবারের বিরতি শেষে প্রায় সবাই যার যার আসনে বসেছেন। আবারও কাজ শুরু করবেন তারা। এমন সময় ৮/১০ জনের একটি দল গ্রাহক বেশে ভেতরে ঢোকে। ব্যাংকের কর্মীরা যখন তাদের সাহায্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই ঘটে বিপত্তি। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র দেখে কর্মীরা বুঝে যান তারা গ্রাহক নয়। সঙ্গে সঙ্গেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয় ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীসহ সবাইকে। শুরু হয় লুটপাট আর মারপিট।
ঘটনা শোনার পর স্থানীয়রা ব্যাংকের ভেতরে যেতে না পেরে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়। তারা মসজিদের মাইক দিয়ে ডাকাতের খবর প্রচার করে। মাইকে প্রচার শুনে ডাকাতরাও সতর্ক হয়ে যায়। নগদ টাকা নিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু চারপাশের অবস্থা খারাপ দেখে তারা গুলি বর্ষণ শুরু করে। সেই সঙ্গে আতঙ্ক ছড়াতে কয়েকটি ককটেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতরা।
ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার তরিকুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মী জানান, বেলা দুইটার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাংকের সামনে এসে গ্রাহক বেশে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। এরপর তারা ম্যানেজার ওয়ালীউল্লাহকে গ্রেনেড দেখিয়ে ভোল্টের চাবি চায়। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে ডাকাতরা তাকে কোপাতে শুরু করে। ডাকাতরা গানম্যান বদরুলকে কোপায় এবং গুলি করে। পরে গ্রেনেড ও গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা লুট করে নেয়। আর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ম্যানেজার ও গানম্যানের।
বাইরের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ব্যাংকের ভেতর থেকে গুলি, গ্রেনেডের শব্দ ও লোকজনের চিৎকার শুনে আশেপাশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন। তারা ব্যাংকটি ঘেরাও করে ডাকাতদের আটকের চেষ্টা করেন। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে ডাকাতরা গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে যায়।
ডাকাতরা গুলি চালালে স্থানীয় চার বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তবে গুলি, গ্রেনেডেও পিছু হটেনি সাধারণ মানুষ। আধুনিক অস্ত্র উপেক্ষা করেই দুই ডাকাতকে ধরে ফেলেন তারা। এসময় গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হয়।
ঘটনার পর ব্যাংকে দেখা যায় পুরো অফিস রক্তমাখা। সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ডাকাতের হামলায় কমবেশি জখম হয়েছেন ব্যাংকের প্রায় সবাই। প্রাণ হারান ব্যাংক ম্যানেজার ওয়ালীউল্লাহ, নিরাপত্তা কর্মী ইব্রাহিম, গ্রাহক সাহাবুদ্দিন পলাশ ও মুনির এবং ঝাল মুড়ি বিক্রেতা নুরুজ্জামান মারা যান। পরে মারা যান আরও দু’জন।
ধরা পড়া ডাকাতদের কাছ থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংক থেকে ওই পরিমাণ টাকাই লুট হয়েছিলো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ডাকাতদের কাছ থেকে তিনটি উচ্চ ক্ষমতার বোমা এবং সঙ্গে থাকা মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ব্যাংক শাখাটির ভেতরেও অবিস্ফোরিত বোমা পাওয়া যায়। উদ্ধার করা তাজা বোমা নিস্ক্রিয় করেন বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যেই এই ডাকাতি বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার ওবায়দুল হক বলেন, আপাত: দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে অস্ত্রধারীরা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যেই ব্যাংকে এসেছিলো। তবে শুরুতে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করে তারা তদন্ত শুরু করেছেন।
গোয়েন্দারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে গেছেন। তাতে দেখা গেছে, তিনজন ব্যাংকটিতে ঢুকেই গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এ কারণে হত্যাকাণ্ডই মূল টার্গেট ছিলো বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।