তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব ও মোবাইলের ধাক্কায় ওয়াশিংটন পোস্টের বিনামূল্যের পত্রিকাও বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের ফ্রি সংস্করণ ‘এক্সপ্রেস’ সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশ করে শিরোনাম দিয়েছে, ‘আশা করি আপনারা দুর্গন্ধময় মোবাইল ফোনই উপভোগ করবেন’।
উপশিরোনাম ছিল: মোবাইল আসক্তদের কারণে ছাপা পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধে তারা বাধ্য হয়েছেন।
মূলত: মেট্রো যাত্রীদের জন্য বিনামূল্যের এই ‘এক্সপ্রেস’ বন্ধ করতে বাধ্য হওয়া সম্পাদক জানান: পাঠকদের ক্রমবর্ধমান ডিভাইস ব্যবহার এবং ছাপা সংস্করণে বিজ্ঞাপনের অপ্রতুলতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা যারা প্রিন্টের রোমাঞ্চ ভালোবাসি, তাদের জন্য এটা অত্যন্ত কঠিন সময়।
সম্পাদক আরও লিখেছেন, ‘মোবাইল প্রযুক্তিতে প্রকাশনার তালিকায় এক্সপ্রেস যুক্ত করুন। দু:খের বিষয়, এটি আমাদের চূড়ান্ত সংস্করণ’।
ছাপা প্রকাশনা বন্ধের ফলে প্রায় ২০ জন সাংবাদিককে বিদায় দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের সংগঠন এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।
ইউনিয়ন জানিয়েছে, ‘কোনো রকমের আগাম সতর্কতা ছাড়াই এই ঘোষণা এসেছে’।
এক বিবৃতিতে পোস্টের মেট্রো প্রকাশনা বন্ধের কারণ হিসাবে মেট্রো স্টেশন ও ট্রেনগুলোতে ওয়াইফাই সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এক্সপ্রেস’ ওয়াশিংটনবাসীর জন্য সকালের যাতায়াতের সময় একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলো। এটি একটি প্রাণবন্ত, অত্যন্ত আকর্ষক প্রকাশনা, যা বছরের পর বছর ধরে ওয়াশিংটন মেট্রো পাঠকদের সেবা দিয়ে আসছে।
তবে ওয়াশিংটন মেট্রো সিস্টেমে ওয়াইফাইয়ের উন্নতির সাথে পোস্টটি এখন সেই দিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি অধিক পাঠক বৃদ্ধির জন্য করা হচ্ছে। পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ডিজিটাল ভার্সনের ওপরই নির্ভর করতে হবে।
ষোল বছর ধরে প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টের ফ্রি পত্রিকা ‘এক্সপ্রেস’ যা ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ চাহিদায় পৌঁছায়। তখন এর বিতরণ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯০ হাজার। বিজ্ঞাপন আয়ও তখন ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, বিনামূল্যে পেয়েও মানুষ এখন আর পত্রিকাটি নিচ্ছিলেন না। এর ফলে বিতরণ সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারে নেমে আসে।
একই অবস্থা মূল ওয়াশিংটন পোস্টের ক্ষেত্রেও। তাদের মুদ্রণ সংস্করণের চাহিদা ক্রমাগত নিম্নমুখি হওয়ায় অনলাইন জার্নালিজমের দিকে মনোযোগ দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট যা এখন একইসঙ্গে একটি ডিজিটাল টিভি, রেডিও এবং পত্রিকা।
গণমাধ্যমের এ পরিবর্তন এবং সর্বশেষ ‘এক্সপ্রেস’ বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জিটিভি এবং সারাবাংলা’র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা চ্যানেল আই অলাইনকে জানান: এটা তো অবধারিতই ছিলো। অনেকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু পত্রিকার মুদ্রণ বন্ধে হয়ে যাচ্ছিলো। আর্থিক কারণে তারা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কর্মী ছাটাই করে, পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়েও প্রকাশ করতে পারছিলো না। ফলে ওয়াশিংটন পোস্ট এবং তার অন্য সংস্করণও সে পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে।
‘আসলে এটাই এখন বাস্তবতা।’
ইশতিয়াক রেজা বলেন: মানুষ ডিজিটাল ভার্সনে নির্ভর করছে এবং আমাদেরও এটাতেই চলতে হবে। আমি ওয়াশিংটন গেলে এবং মেট্রোতে চড়লে ওয়াশিংটন পোস্টের এই মেট্রো সংস্করণ নিয়মিত পড়তাম। এখন খুব মিস করবো।
‘দু:খ হবে যখন মুদ্রণ পত্রিকাটি পাবো না।’