ইতিহাস পক্ষে নেই। তাতে কী! ইতিহাসের জন্মই হয় নতুন করে লেখার জন্য। মেক্সিকো আছে সেটাই লেখার অপেক্ষায়। প্রতিপক্ষ হট-ফেভারিট শক্তিশালী ব্রাজিল। যাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের চার দেখায় কোনো জয় নেই এল ট্রাইয়োদের। সেই ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গতে চায় হুয়ান কার্লোস ওসোরিওর দল। কিন্তু প্রশ্ন, সর্বোচ্চবার বিশ্বসেরা যারা সেই ব্রাজিল কী এতো সহজেই ছেড়ে দেবে মেক্সিকোকে?
ব্রাজিল মোটেই ছেড়ে কথা বলবে না। টিটে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিতে প্রস্তুত শিষ্যরা। এমন অবস্থায় পরিসংখ্যানও ছাড় দিচ্ছে না মেক্সিকোকে। রাশিয়া বিশ্বকাপকে নিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো প্রথমপর্বের বাধা পেরোনো গেছে ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডই আবার অভিশাপ মেক্সিকোর জন্য। কারণ এই সাতবারের মধ্যে ছয়বারই প্রতিপক্ষ দলগুলো কোয়ার্টারের স্বপ্ন ভেঙেছে মেক্সিকানদের। সেখানে ব্রাজিলও আছে চেনাছন্দেই।
মেক্সিকোর ইতিহাসে স্বস্তির পিঠে আবার অস্বস্তির কারণও আছে সেলেসাওদের। ১৯৯৯ সালের পর শেষ ১৫বারের দেখায় ৭ জয় নিয়ে এগিয়ে মেক্সিকো, ব্রাজিলের জয় ৫টিতে। যদিও দুদলের মোট ৪০ দেখায় ২৩ জয় নিয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ব্রাজিলই, আর এল ট্রাইয়োদের জয় মোট ১০টিতে।
এসব পরিসংখ্যান ভুলে থাকা যাক। কারণ নিজেদের দিনে যেকোনো দলই ভয়ঙ্কর। যেটা ভালোমত টের পেয়েছে জার্মানি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে মেক্সিকো। ব্রাজিলের সামনে তাই কঠিন পরীক্ষা। দলের ভার ধরলে মেক্সিকোর জন্য সেই পরীক্ষাটা হওয়ার কথা অতি-কঠিন।
চার বছর আগের বিশ্বকাপ থেকেই অনুপ্রেরণা পেতে পারে মেক্সিকো। সেবার ব্রাজিলকে তাদের মাঠের একহাতে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন গির্লোমো ওচোয়া। স্বাগতিকদের বাধ্য করেছিলেন গোলশূন্য ড্র মানতে। সেই ওচোয়া এখনও মেক্সিকোর গোলবারের নিচে অতন্দ্রপ্রহরী।
তবে চারবছর আগে স্মৃতি মনে রেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুললে চলবে না মেক্সিকোর। সেই ব্রাজিল আর এই ব্রাজিল আকাশ-পাতাল তফাৎ। সেবারের দলটা ছিল পুরোপুরি নেইমার নির্ভর। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার এখনও সেলেসাওদের মূল ভরসা, দলের নিউক্লিয়াস। তবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কৌতিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসাস, পাউলিনহো, ফিরমিনোর মতো ইউরোপ মাতানো তারকারা। কৌতিনহো তো এবার কেবল পারফরম্যান্সেই নন, তারকা-খ্যাতিতেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নেইমারকে!
তবে নেইমারকে নিয়েই বেশি সতর্ক মেক্সিকো। অবশ্য খেলা নিয়ে নয়, পিএসজি তারকার অতি নাটুকেপনা নিয়ে। সোমবার রাত ৮টায় এ দুই দলের ম্যাচ পরিচালনা করবেন যিনি, সেই ইতালিয়ান রেফারি জিয়ানলুকা রোচ্চিকে সতর্ক করে দিয়েছেন মেক্সিকো অধিনায়ক আন্দ্রেস গুয়ার্দাদো। ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া যেন নেইমারের পক্ষে রায় না দেয়া হয় একটিও!
‘আমরা সবাই জানি নেইমার কেমন। তবে আমার বা দলের কারও দায়িত্ব নয় সে কেমন তা বিচার করা। এটা ফিফা এবং রেফারিদের দায়িত্ব। এখন ভিএআর আছে। সেটা দিয়ে নেইমারের কৌশল বিবেচনা করা উচিত।’
মেক্সিকো অধিনায়ক ইঙ্গিত দিয়েছেন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা ব্রাজিল ম্যাচের জন্য। গুরু ওসারিও ভোট দিলেন শিষ্যর পক্ষেই, ‘আমরা আক্রমণাত্মক খেলাই খেলবো। যা আমাদের জয়ের পথ দেখাবে। আমরা ম্যাচ শেষে হাসিমুখেই মাঠ ছাড়তে চাই। লজ্জা কিংবা মাথা নুয়ে নয়।’
রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটেছে দুই মহাতারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। তাদের পথ ধরে নেইমারকেও যেন না হারায় বিশ্বকাপ, ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কাসেমিরো সে ব্যবস্থাই করতে চান। বলেছেন, মেক্সিকান খেলোয়াড়দের কথায় মোটেও বিভ্রান্ত নয় তার দল। নেইমার ও ব্রাজিলকে পরের রাউন্ডে তুলতে নিজেদের সেরাটা দিয়েই খেলবে ব্রাজিলিয়ানরা। তবে কেবল নেইমারের উপরই নির্ভরশীল থাকবে না ব্রাজিল, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
‘কোন সন্দেহ নেই যে ওরা (মেক্সিকো) আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবে। আর এটাই তো স্বাভাবিক। তবে এটা কিন্তু ব্রাজিলের জন্যই ভালো। আসলে তাদের বৈশিষ্ট্যই এমন। আর তাদের কোচ দারুণ বুদ্ধিমান।’
‘অবশ্যই নেইমার আমাদের মধ্যে সেরা। এটা লুকানোর কিছু নেই। তবে একজনকে নিয়ে কিন্তু জেতা যায় না, জিততে হলে পুরো দলকেই নিয়ে খেলতে হয়। আমাদের দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে। সবাই খেলাটাই হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
গত চার বছরে টানা জিতে এসেছে ব্রাজিল। সবার আগে বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে। গ্রুপপর্বে খুববেশি গোল হয়ত করতে পারেনি। তবে সুযোগ তৈরি করেছে অনেক। প্রতিপক্ষ রক্ষণে একের পর এক ত্রাস সৃষ্টি করে গেছে। সাফল্য আসতে সময় লেগেছে। তবে সেটা তাদের গ্রুপপর্বে সেরা হতে আটকে রাখতে পারেনি। জয়ের মধ্যে থাকা এই ব্রাজিল দারুণ রকমের ছন্দময় ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত। এখন দেখার সামারা অ্যারেনার গ্যালারি ব্রাজিলিয়ান সাম্বার ছন্দ নাচে নাকি ঢেউ তোলে মেক্সিকান ওয়েভ!