বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমার নিরাপত্তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব না ছড়াতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে পুলিশ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের প্রায় আড়াই হাজার বৌদ্ধ মন্দিরে আগামী ১৮ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হবে। বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সভায় আইজিপি বলেন, বৌদ্ধ পূর্ণিমার নিরাপত্তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন শঙ্কা নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করে বৌদ্ধ মন্দির কেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বৌদ্ধ পূর্ণিমাকে নিয়ে কোন গোষ্ঠী বা মহল যাতে কোন ধরণের গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ সার্বক্ষণিক মনিটর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা গুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন এবং গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানোর জন্য সকল পুলিশ ইউনিটকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং ব্লক রেইডের ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন: কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তা নিয়ে বৌদ্ধ মন্দির সমূহে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিটসমূহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাগ, পার্স, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি সাথে না আনার জন্য পূণ্যার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৌদ্ধ মন্দিরসমূহে সিসিটিভি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র স্থাপন এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আইজিপি আশা প্রকাশ করে বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিবারের মত এবারও দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হবে।
সভায় উপস্থিত বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বুদ্ধ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে গৃহীত সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা পুলিশ প্রধানকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ডিএমপি’র নিরাপত্তা নির্দেশনা
বুদ্ধ পূর্ণিমাকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে ডিএমপি কর্তৃক সুদৃঢ়, সমন্বিত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থল ও শোভাযাত্রায় অপরিচিত কোন লোক বা অস্বাভাবিক কিছু দেখলে পুলিশকে অবহিত করাসহ বুদ্ধ পূর্ণিমার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রমে নগরবাসীকে সহায়তা করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে ।
মন্দির/ অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নির্দেশনা
সকল বৌদ্ধ মন্দির ও তার আশেপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। বৌদ্ধ মন্দির ও আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।
মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল দর্শনার্থীকে ম্যানুয়ালী ও আর্চওয়ে দিয়ে তল্লাশি করিয়ে প্রবেশ করানো হবে।
মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে এবং তাদের আলাদা পোশাক, আর্মড ব্যান্ড বা আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। সকল ধরণের মাদকদ্রব্য, আতশবাজি ও পটকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ফানুস উড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
নামাজের সময় সকল ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজানো বন্ধ রাখতে হবে।
সর্ব সাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য মন্দিরের আশপাশে কোন ভাসমান দোকান ও হকার বসতে দেয়া হবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে মন্দির সংশ্লিষ্ট রাস্তায় পর্যাপ্ত বেরিকেড ব্যবস্থা রাখা হবে। সন্দেহভাজন কাউকে মন্দিরে প্রবেশের পূর্বেই তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে প্রবেশ করাতে হবে।
বড় ব্যাগ, ব্যাক-প্যাক, পোটলা, ধারালো কোন বস্তু, দাহ্য পদার্থ নিয়ে মন্দির ও অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ থাকবে। অনুষ্ঠানস্থল বোম্ব ও ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করানো হবে।
অগ্নি নির্বাপকের ব্যবস্থা হিসেবে পর্যাপ্ত ফায়ার টেন্ডার ও দ্রুত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হবে। মন্দিরের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের সাথে সমন্বয় করে স্থানীয় সকল শ্রেণী পেশার প্রতিনিধি নিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন কমিটি গঠন করা হবে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক অগ্রিম সংবাদ সংগ্রহপূর্বক পোশাকী পুলিশকে সরবরাহ করা হবে।
শোভাযাত্রা কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নির্দেশনা
শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী শুক্রবার, ১৭ মে সকালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ আয়োজিত শান্তি শোভাযাত্রা শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে প্রেস ক্লাবে শেষ হবে এবং শনিবার, ১৮ মে শনিবার সকালে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার আয়োজিত শান্তি শোভাযাত্রা ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার হতে শুরু হয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম, কমলাপুর হয়ে পুনরায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।
শোভাযাত্রা শুরুর পূর্বে সকলকে তল্লাশি করে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করানো হবে।
শোভাযাত্রা শুরুর পর পথিমধ্যে কাউকে নতুন করে শোভাযাত্রায় ঢুকতে দেয়া হবে না।
পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে শোভাযাত্রার চারপাশ বেষ্টনি দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
শোভাযাত্রায় কোন ধরণের ব্যাগ ও ব্যাক-প্যাক, দাহ্য পদার্থ, ধারালো বস্তু, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।