যারা নিজেকে কখনো উন্নত করতে পারে না তারাই অন্যদের দমন করার জন্য বেশি উৎসাহী হয়। নারীশক্তির বিস্তার নিয়ে তারা ভীত, তাই নারীকে দমন করতে চায় তারা। সেজন্যই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিরা এমন সব নির্দেশনা সম্বলিত মেইল গণমাধ্যমকে পাঠাচ্ছেন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি সংস্থা ‘নিজেরা করি’র চেয়ারম্যান খুশি কবির বলেন, শুধু এবারের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমই নয় এর আগে হিজবুত তাহরিই হোক বা হেফাজতে ইসলাম সবাই নারী সংক্রান্ত কথাবার্তাই বেশি বলেন। এদের দাবি এরা সবাই আলাদা। কিন্তু আদতে সবাই একই মতাদর্শের অনুসারী। তারা নারীদের অবদমন বা গৃহবন্দি করে রাখতেই চায় সারাটা জীবন।
একই কথা বলেন সূর্যাবার্তা২৪.কমের সম্পাদক সুমি খান, একটি দেশের সচেতনতাকে অন্ধকারে ডুবাতে না পারলে তো আর তাদের স্বার্থ হাসিল হবে না। তাই নারীকে অবদমনের ইচ্ছে তাদের মজ্জাগত। নারীদের একটি তৃতীয় চোখ থাকে। যেটাকে বলা যায় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। নারীর এই অগ্রগতি রুদ্ধ করতে না পারলে তো তারা তাদের অন্ধ মত বিস্তার করতে পারবে না তাই এসব নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নির্দেশনা পাঠালো সেটা বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো তবে নিজেদের এই সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসতে হবে নারীদেরই, এমনটাই মনে করেন খুশি কবির ও সুমি খান।
খুশি কবির বলেন, নারীরা এখন অনেকেই বাইরে কাজ করছে। তবে এমন হুঁশিয়ারিতে ভয় পেলে চলবে না। নারীদের এখন আরো দ্বিগুণ শক্তিতে কাজ শুরু করতে হবে। যদি এসব কথায় আমরা কর্ণপাত করি তাহলে তারা আরো বেশি প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। আর প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেই তো এভাবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
একই বক্তব্য অবশ্য সুমি খানেরও, যদি কারও অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে কেবলমাত্র আদালত আসামীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে পারে। তাছাড়া আর কারো ক্ষমতা নেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার। এই সমস্যার প্রতিকার চাইলে নারীকে অবশ্যই আরো দ্বিগুণ শক্তির সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
একই সঙ্গে অবশ্য নিজেদের মধ্যে সংযোগটাও বৃদ্ধি করার কথা বলেন তিনি। বলেন, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিভেদ, বিদ্বেষ ভুলে সবাই একত্রিত হয়ে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। নারীরা এখন বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। এক সময়তো জামায়াত বলেছিলো নারীর কখনো দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঠিক না। তাই বলে কি সেটা হচ্ছে না। তাদের দলেও নারী আছে। তবে তারা নারীকে শুধু তাদের কাজের জন্য ব্যবহার করে। ধর্মের দিকে দেখলে বিবি খাদিজা(র) নিজে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, বিবি আয়েশা যুদ্ধে গেছেন। তাহলে এখন কেনো তাদের নিষেধাজ্ঞা নারীদের মানতে হবে।
নতুন এই সমস্যা সমাধানে এখন সরকারকেই সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন খুশি কবির। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের এখন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। দেশে কেউ ছোট্ট একটা স্ট্যাটাস দিলে যদি তাকে কারাগারে যেতে হয় তাহলে এত বড় একটা মেইল পাঠানোর পরও কেনো এসব জঙ্গিরা আইনের বাইরে থাকবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকেও এক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা নিতে হবে। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রভাবিত করতে পারে এবং একই সঙ্গে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করবেন নিশ্চয়ই।