ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ায় বীজ মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন মা জেসমিন হোসেন।আর পেছনে তাকাতে হয়নি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস শেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেজিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্ডিওভাস্কুলার-এ এমএস সম্পন্ন করেন। এরপর থেকে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে কার্ডিয়াক বিভাগে এ কর্মরত আছেন দেশের দুইশতাধিক কার্ডিয়াক সার্জনের মধ্যে একমাত্র নারী কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী।
তিনি হৃদরোগ হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান’র টিমে কাজ করেন। তিনি মূলত এ্যাডাল্ট কার্ডিয়ো সার্জারি বিশেষ করে ভাল্ব সার্জারি, বাইপাস সার্জারি টিমে কাজ করেন। এছাড়া জন্মগত শিশুদের হৃদরোগ চিকিৎসা তিনি অংশগ্রহণ করেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ডা. সাবরিনা বলেন,দেশের মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়েই চ্যালেঞ্জিং ডাক্তারি পেশা বেছে নেওয়া। তিনি জানান, তার নারী কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার পেছনের গল্পটাও বেশ সংগ্রামের।একমাত্র নারী ছাত্রী হওয়ার অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারপরও শিক্ষকদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় তিনি নিজেকে মেলে ধরেন।
তিনি আরো জানান, কার্ডিয়াক সার্জারি মানুষের সেবা করার ব্যাপক একটি ক্ষেত্র। তিনি এ চিকিৎসার মাধ্যমে নিজেকে মানবসেবায় আরো উজাড় করে দিতে অবিলম্বে দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে সাধারণ দরিদ্র রোগীদের হার্ট স্ক্রিনিং করতে চান। ইতিমধ্যেই তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে সপ্তাহে একদিন রোগী দেখা এবং কার্ডিয়াক রোগী স্ক্রিনিং শুরু করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের চেতনায় বিশ্বাসী ডা. সাবরিনা ভবিষ্যতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে কাজ করতে চান। বাংলাদেশে এখনো কার্ডিয়াক ট্রন্সপান্ট হয় না। ভবিষ্যতে এই কাজটি করতে পারলে আরো অনেক জটিল ও কঠিন হৃদরোগীদের বাঁচানো সম্ভব হবে।
সাবেক সচিব সৈয়দ মোশারফ হোসেনের কন্যা সাবরিনা জানান দেশে জন্মের তিন বছর পরই তিনি হল্যান্ডে যান। পরিবারের সবাই আমেরিকাতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করলেও ডাক্তারি পড়াশুনার জন্য গত দশ বছর ধরে দেশেই রয়েছেন।
যে নারী রাধে সে চুল ও বাধে এর দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ ডা.সাবরীনা। শুধুমাত্র ডাক্তার হিসেবেই পারদর্শী নয় তিনি। নৃত্য, চিত্রকলা ও গানেও তিনি সমান পারদর্শী। ছায়ানট ও নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদের কাছে নাচ শিখেছেন, নজরুল একাডেমীতে শিখেছেন গান আর ছবি আঁকা শিখেছেন চারুকলায়।
বর্তমানেও তার সব কাজেই পরিবার ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর সহযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে স্বামীর সহযোগিতা ও অবদানের কথাও বলেন তিনি। এদেশের মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যেই তিনি বাংলাদেশে আছেন এবং থাকবেন। মানব সেবায় কার্ডিয়াক সার্জারি পেশায় আসতে দেশের নারী মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী।