বিশ্বকাপ মিশনের খুব কাছে এসে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপ-জার্সি উন্মোচনের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে না থাকায় সমালোচনা হচ্ছে খুব। আয়ারল্যান্ড সফরেও যেতে পারেননি দলের সঙ্গে। মাশরাফী-তামিম-মুশফিকরা সকালে রওনা হলেও সাকিব পরিবারসহ বিমানে চেপেছেন সন্ধ্যায়।
সাকিবের সঙ্গে সতীর্থ খেলোয়াড়দের দূরত্ব তৈরি হওয়া তাই স্বাভাবিক। বিশ্বমঞ্চে ব্যাটে-বলে জ্বলে ওঠার আগে দলের সঙ্গে একাত্ম হওয়াই টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হবেন বলেই বিশ্বাস সাকিবের ছোটবেলার কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের।
‘যেটি ঘটেছিল সেটি নিয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা নেই। অনেকে অনেক কথা বলছে, আসলে কী হয়েছিল সেটি না জেনে আমার জন্য মন্তব্য করা কঠিন। বিশ্বকাপের ফটোসেশনে সে থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আমি নিশ্চিত, না থাকার পেছনে কোনো কারণ নেই। কোথাও একটা গোলমাল হয়ত হয়েছে। কখন, কী হবে মেসেজের ভেতর কোথাও একটা কিছু, এরকম সম্ভাবনা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমি মনে করি না ও জানত এবং অংশগ্রহণ করেনি। এর বাইরে আমার মাথায় কিছুই আসে না।’
বিকেএসপির সাবেক কোচ নাজমুল আবেদীনের প্রত্যাশা আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকেই দলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সামনের দুটি মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন সাকিব।
‘নিঃসন্দেহে সাকিব আমাদের দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ও একাই না, আরও অনেকেই আছে যাদের ওপর আমরা ভরসা করি। তাদের মধ্যে সাকিব অন্যতম। তার এখন মানসিকভাবে খুব ভালো অবস্থায় থাকা জরুরী। তার নিজের খেলার জন্য এবং দলের জন্য।’
‘নিজের এবং দলের অন্যদের উদ্বুদ্ধকরণে তার ভূমিকা থাকা উচিত এবং আশা করি সে রাখবে। দলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সাকিব যদি ভাল খেলতে পারে, যেহেতু ব্যাটিং-বোলিং দুটিই ও করে, তার ভালো পারফরম্যান্স দলকে অনেক বেশি চাঙা করবে। আশা করি সাকিব বড় একটা ভূমিকা রাখবে, অন্যদের ভালো খেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।’ -বলেন নাজমুল আবেদীন।
সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপ মিশন সামনে রেখে অনুশীলন ক্যাম্প শুরুর আগেই। আইপিএল ছেড়ে ক্যাম্পে যোগ দিতে বলা হয় বিসিবির তরফ থেকে। সাকিব ইতিবাচক সাড়া দেন ম্যাচের পর ম্যাচ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের একাদশে ঠাঁই না হওয়ায়। যদিও পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলান দলটির কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটার নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ায় সাকিবের ম্যাচ পাওয়ার সম্ভাবনা জাগায়। আট ম্যাচ বসে থাকার পর নিজের দ্বিতীয়-তৃতীয় ম্যাচটি খেলে চলে আসেন বাংলাদেশে।
পরদিন সকালে মিরপুরে এলেও চলে যান কিছুক্ষণ থেকে। দুপুরে ছিল বিসিবির পরিচালকদের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যাহ্নভোজ, বিশ্বকাপের জার্সি উন্মোচন ও ফটোসেশন। সকালের অনুশীলন সেশনের পর নানা আনুষ্ঠানিকতায় সবাই ব্যস্ত সময় কাটালেও দলীয় আনুষ্ঠানিকতার সময় পাওয়া যায়নি সাকিবকে।
যেটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়েন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যদিও পরদিন সাকিব তার বোর্ড প্রধানের বাসায় গিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই বলে যে, বিসিবির বার্তা পড়া হয়নি তার। নাজমুল হাসানের ভাষ্য মতে, সাকিব বলেছে জানলে সে আসত। সাকিবের কথা বিশ্বাস করেই এ নিয়ে আর কথা বাড়াননি বিসিবি সভাপতি।
সাকিব ইচ্ছা করেই আসেনি এমনটি বিশ্বাস করতে চান না মেন্টর আবেদীনও। পাশাপাশি সাকিবের আইপিএল খেলা নিয়েও সমস্যা দেখেন না তিনি, ‘সাকিবের মতো আরও চারজন খেলোয়াড় যদি আইপিএল খেলতে যেত, তারাও হয়ত আয়ারল্যান্ডেই দলের সঙ্গে যোগ দিত। আইপিএল খেলাটা নেতিবাচকভাবে নেয়ার কারণ কী হতে পারে, তা আমার জানা নেই।’
সাকিবের আরেক গুরু বিকেএসপির সাবেক কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ফটোসেশনের ব্যাপার নিয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি বলেছেন সাকিবের প্রস্তুতি সম্পর্কে। তার মতে, আইপিএলে সাকিব খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে।
প্রিয় কোচের অধীনে অনুশীলন করতে আইপিএল চলাকালীন সালাউদ্দিনকে ভারতে ডেকে নিয়েছিলেন সাকিব। সেখানে কয়েকদিন অনুশীলনও করেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে সালাউদ্দিন বললেন, ‘ইনজুরি নিয়ে সাকিবের আর কোনো সমস্যা নেই। ভারতে সে খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। মাঠে ভালো-মন্দ তো হতেই পারে। প্রস্তুতি অনেক ভালো নিয়েছে সে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেললে হয়ত পুরো ছন্দে ফিরে আসবে। আর বড় ক্রিকেটাররা সব পরিস্থিতিতে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। আশা করি সব কাটিয়ে উঠে সাকিব বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতাতে অবদান রাখবে।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বললেন, ‘এটা আরেকটা টুর্নামেন্ট, এখানে খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। বাংলাদেশ ওয়ানডে খুব ভালো খেলে। আমাদের ভালো দিক হচ্ছে চারজন ব্যাটসম্যান আছে যারা দীর্ঘদিন ধরে খেলে আসছে এবং অনেক অভিজ্ঞ। ৫-৬ হাজার করে রান করেছে তামিম-মুশফিক-সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। তাদের সঙ্গে যদি জুনিয়ররাও ভালো খেলে তখন ভালো ফলাফলের সুযোগ আছে।’