পাঠ্যপুস্তক জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে সক্ষম। উপকূলের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলার শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এই গবেষণার সংবাদ প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান ও উন্নয়ন নির্ভর সংবাদ মাধ্যম সাইডেভ ডট নেট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উপকূলীয় ৭ টি জেলার ৬’শ স্কুলের ৩ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে ক্লাসে এবং বাড়িতে জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তুলে ধরা বইয়ের ম্যানুয়াল ( বিস্তারিত বিবরণ) পড়ে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়টি বেশ ভালোভাবে রপ্ত করতে পারছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহায়তায় তৈরি এই ম্যানুয়াল পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার । এর কার্যকারিতা নিয়ে উপকূলের শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট বা সংক্রামকব্যাধী বিশেষজ্ঞরা।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
গবেষণা করতে গিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে দু’টি গ্রুপে ভাগ করেন বিশেষজ্ঞরা। একটি গ্রুপকে ৩ দিনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রশমনে তৈরি করা ম্যানুয়ালটি পড়তে দেয়া হয়। আরেকটি গ্রুপকে একই বিষয়ে একটি গতানুগতিক বর্ণনা নির্ভর লিফলেট সরবরাহ করা হয়। এরপর দুই গ্রুপকেই একজন করে শিক্ষকের সাথে ছয় মাস ধরে দলগত আলোচনায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
তারপর শিক্ষার্থীদের একটি পরীক্ষা নিয়ে গবেষকরা দেখতে পান, ম্যানুয়াল পাওয়া গ্রুপটির শিক্ষার্থীরা লিফলেট পাওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি নম্বর তুলেছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় এই গবেষণা ফলাফলকে বড় সাফল্য বলে মনে করেন নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট আবুল হাসনাত মিল্টন। তার মতে এই গবেষণা উপকূলীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বিশেষজ্ঞ ইকবাল কবির জানান,‘ বর্ষা পরবর্তী সময়ে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার ও ডেঙ্গুর প্রকোপ সম্পর্কে যদি একজন শিক্ষার্থীর স্পষ্ট ধারণা থাকে তবে সে এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সহজেই গ্রহণ করতে পারবে। এভাবে নিজে জেনে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
ডব্লিউএইচও কর্মকর্তা শামসুল গফুর মাহমুদ জানান, পাঠ্যপুস্তকের সাহায্যে উপকূলের শিক্ষার্থীরা লবণাক্ততার প্রভাবের মতো বিষয় সম্পর্কে নিজে যেমন জানছে তেমনি ভবিষ্যতে তারা ঝুঁকিপ্রশমনে অগ্রণী ভূমিকায় থাকার যোগ্যতাও অর্জন করছে।
গবেষণার পাওয়া এই সাফল্যের আলোকে বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশের পাঠ্যপুস্তকে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রশমন বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।