মারাত্মক করোনা ভাইরাসে নিজেদের দেশে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমতির দিকে রয়েছে বলে জানিয়েছে চীন সরকার। তবে বৈশ্বিকভাবে বেশ দ্রুত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
চীন
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন প্রকাশিত দৈনিক আপডেট অনুসারে, সর্বশেষ বুধবারের হিসাবেও চীনের মূল ভূখণ্ডে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কম দেখা গেছে।
বুধবার দিনশেষে দেশটিতে ৪৩৩ জন নতুন আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ওইদিন করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) মারা গেছেন ২৯ জন।
নতুন এই ৪৩৩ জনের মধ্যে ৪০৯ জন এবং ২৯ জনের মধ্যে ২৬ জনই হুবেই প্রদেশের। এই হুবেইয়ের উহান শহরেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ হিসাবে চীনে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৯৭ জন। এ ভাইরাসে মারা গেছেন মোট ২ হাজার ৭৪৭ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনগণকে ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শদান, বেশি সংখ্যক মানুষ জড়ো হতে না দেয়া এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ চীন সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল তা কাজ করছে।
সাউথ কোরিয়া
সাউথ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনুষ্ঠিতব্য যৌথ সামরিক অনুশীলন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এক রাতের মধ্যে নতুন করে ৩৩৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সাউথ কোরিয়া। এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯৫ জনে, আর মারা গেছেন ১৩ জন।
বুধবার সাউথ কোরিয়ায় অবস্থানরত এক মার্কিন সেনার দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিবিসি জানিয়েছে, তিনি অতি সম্প্রতি সাউথ কোরিয়ার দায়েগু শহরের ঠিক বাইরে অবস্থিত মার্কিন সেনা শিবির ক্যাম্প ক্যারোলে গিয়েছিলেন। এই দায়েগু থেকেই কোরীয় অঞ্চলে করোনা ছড়ানো শুরু হয়।
এটিই সাউথ কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। এছাড়া ১২ জনের বেশি সাউথ কোরীয় সেনা সদস্যের করোনা শনাক্তকারী পরীক্ষা পজেটিভ এসেছে বলে জানানো হয়েছে।
সাউথ কোরিয়ার শিনচেওনজি চার্চের অধিকাংশ সদস্যকে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের ৮০ শতাংশের পরীক্ষার ফলই পজেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিবিসি প্রতিনিধি।
ইটালি
ইটালিতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এরই মধ্যে সেদেশে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭০ জন। মারা গেছে ১২ জন। আরও সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি অনেক ফুটবল ম্যাচও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেলও।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে নতুন করে আরো দুইজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ জন।
জাপান
জাপানে করোনা আক্রান্ত এক নারী চিকিৎসায় পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর আবারও আক্রান্ত হয়েছেন। ওসাকা শহরের অধিবাসী চল্লিশোর্ধ্ব ওই ট্যুর গাইডের দেহে প্রথম জানুয়ারিতে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। চিকিৎসার পর পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলে ১ ফেব্রুয়ারি তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সুস্থ হওয়ার বেশ কিছুদিন পরে গলা বসা ও বুকে ব্যথার সমস্যা নিয়ে শনাক্তকারী পরীক্ষা করলে আবারও তার দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
সুস্থ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা জাপানে এই প্রথম। তবে চীনে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা জানা গেছে।
সৌদি আরব
সতর্কতা হিসেবে মক্কা ও মদিনাসহ ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিটি এলাকা সফরের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে বিদেশিদের প্রবেশ আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত ওমরাহ হজের উদ্দেশ্যে দেশটিতে সফর বন্ধ রাখছে সরকার।
অবশ্য জুলাইয়ের হজ এ নির্দেশে প্রভাবিত হবে কিনা তা জানানো হয়নি।
ওমরাহ ছাড়াও অন্যান্য উদ্দেশ্যে সৌদি আরব সফরের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এমন দেশ থেকে সৌদিতে সফর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত দেশটিতে কেউ আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।
ইরান
ইরানে এখনও পর্যন্ত ১৩৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। চীনের পর করোনায় প্রাণ হারানো এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরছি। যিনি তার দেশের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমকে নিয়মিত ব্রিফ করতেন। বর্তমানে তাকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।
তাইওয়ান
তাইওয়ানের সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সেখানে ৩২ জন আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে সরকার। তাই সাবধানতা হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মহামারী মোকাবিলা ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে।