স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নোটিশ দেখতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাননি কোনো এসএমএস। যখন অন্যের মাধ্যমে জানতে পারলেন, তখন সময় বেশি বাকি নেই। তড়িঘড়ি করে এক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে মাইক্রোবাস ঠিক করেন। তবু নির্ধারিত সময়ের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে না পারায় ভর্তি হতে পারলেন না তিনি।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম নিপুণ বিশ্বাস। নীলফামারি সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের এই তরুণ এবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে দীর্ঘ সড়কপথ পাড়ি দিয়ে নীলফামারি থেকে যশোরে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হয়নি তার।
সংবাদ মাধ্যমে খবরটি আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপুণের ভর্তি না হতে পারার খবরটি চোখ এড়ায়নি চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীরও।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নির্মাতা ফারুকী। লেখায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন ফারুকী।
ফেসবুক পোস্টে ফারুকী লিখেছেন,‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ভর্তি হতে পারছেন না নিপুণ বিশ্বাস। নিপুণ দরিদ্র ঘরের সন্তান। তার বাবা নাপিতের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালান। ফলে নিপুণের কোনো স্মার্ট ফোন নাই। স্মার্ট ফোন এবং নেট কানেকশন না থাকাতে তার পক্ষে বারবার ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা সম্ভব হচ্ছিলো না সে টিকেছে নাকি টিকে নাই। নিয়ম ছিলো কর্তৃপক্ষ মেসেজ দিয়ে জানাবে। কিন্তু তার মোবাইলে মেসেজও আসে নাই। যে দিন ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ছিলো তার আগের দিন সে কারো একজনের কাছে জানতে পারে সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারপরই দ্রুত টাকা জোগাড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয় সে। যেহেতু ওটা ছিলো শেষ দিন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই মারফত ফোন করে ডিনকে জানায় যে সে পথে আছে। যাই হোক তার পৌঁছতে পৌঁছতে দেরী হয়ে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তি করতে অপারগতা জানায়। এই পর্যন্ত পড়ে আমি চোখ বন্ধ করে নিপুণকে দেখতে পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে জীর্ণ স্যান্ডেল পায়ে নিপুণ দাঁড়িয়ে। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। তার গলা আটকে আটকে আসছে। সে বুঝতে পারছে না সে কাকে দোষ দিবে? তার মোবাইল না থাকাকে? মেসেজ না আসাকে? পথে দেরী হওয়াকে? নাকি তার দরিদ্র পিতাকে?’
ফারুকী লিখেন, ‘আচ্ছা কবে থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলা এতো নিষ্ঠুর হয়ে উঠলো? কবে থেকে শিক্ষকেরা হয়ে উঠলো এরকম বেরহম? আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকের নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছি। আমি তো দেখেছি তারা ছাত্রদের বিপদে আপদে কীভাবে পাশে দাঁড়ান। আইনকে ছাত্রের পথের কাঁটা না করে, আইনের হাত মচকে দিয়ে ছাত্রের জন্য রাস্তা বানান। সেই সব শিক্ষকদের দিন কি তবে শেষ? আমরা তবে কাদের শিক্ষক বানাচ্ছি? কী শিক্ষা দিবেন তারা আমাদের?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফারুকী আরো লিখেন, ‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখনও সময় শেষ হয়ে যায় নাই প্রমাণ করার যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হৃদয়ও থাকা লাগে।’