এ দেশে হরদম হাজার গল্প সৃষ্টি হয়, শত ইস্যুতে। তার ভেতর মাশরাফী নামক একটি গল্প শোনা যায় সময়ে-অসময়ে। গল্পের ওই গাছটা পুরনো। শুধু মাঝে মাঝে কয়েকটি পাতা যোগ হয়। দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সঙ্গে একান্তে আলাপ করে আরও কয়েকটি নতুন ‘পাতা’ যোগ করার গল্প জানাচ্ছে চ্যানেল আই অনলাইন।
মাশরাফী এখনো ক্রিকেট খেলেন। এটা কিছুতেই বিশ্বাস হয় না তার হাঁটুর অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ইয়াংয়ের। দুই হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার পরও বল করে যাওয়াটাকে তিনি অলৌকিক বলে থাকেন। ওই অলৌকিক ঘটনা সত্যি হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন মাশরাফী। সেই গল্পে যেমন আক্ষেপ আছে, আছে দৃঢ়তা আর একটি শিক্ষাও, ‘আমার ক্যারিয়ার ওভাবে বিকশিত হতে না পারার প্রধান কারণ ইনজুরি। ইনজুরি আমার কাজ অনেক কঠিন করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি খেলে যাচ্ছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। কখনও হাল ছেড়ে দেইনি; এটা নিজের কাছেই শিক্ষণীয় কিছু।’
সবসময় যে টেস্ট ক্রিকেটের জয়গান করেন, সেই টেস্টে মাঠে নামতে পেরেছেন মাত্র ৩৬ বার। ২০০৯ সালে ইনজুরিতে পড়ার পর থেকে আর টেস্ট খেলতে পারেননি। টি-টুয়েন্টিও ছেড়ে দিয়েছেন। সামনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। সবাই যখন ক্যাম্পে একাট্টা হয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত, মাশরাফী তখন একাকী পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এভাবে একা-একা শুধু ওয়ানডে সামনে রেখে কীভাবে নিজেকে ফিট রাখা সম্ভব? উত্তরে মাশরাফী কিছুটা দার্শনিক, ‘কঠিন অবশ্যই। কিন্তু তারপরও আপনি যদি নিজের লক্ষ্য সেট করেন, আর সেটাকে সর্বোচ্চ জায়গায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন, তাহলে সব কঠিন কাজই সম্ভব।’
বোলিংয়ে আগের সেই গতি নেই। কিন্তু নিখুঁত লাইন, লেন্থ আর বৈচিত্র্য থাকায় এখনও দেশের সেরা বোলারদের একজন তিনি। গতি কমালেও মাশরাফী একটি জায়গায় নিজেকে স্থির রেখেছেন, ‘যদি কোনও বোলারের লাইন, লেন্থ ভাল না হয়, তার স্কিল যদি ওই লেভেলে না থাকে, সুইংয়ের অ্যাবিলিটি বা চেঞ্জ অব পেস যদি না থাকে; শুধু জোরে বল করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিন। শুধু কঠিন না, সে পারবেও না। এই জিনিসটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য শেখার ব্যাপারে আমি খুব গুরুত্ব দিয়েছি। আপনি কোন ফরম্যাটে খেলছেন, সেটা ব্যাপার না। আপনি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়, এই অনুভূতি থাকতে হবে, ওটা থাকলে কাজটা করা সহজ।’
বিকেএসপির সাবেক কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম একবার চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, মাশরাফী ভালোমানের একজন ব্যাটসম্যানও হতে পারতেন, যদি ব্যাটিংয়ে আরেকটু চোখ দিতেন।
ওই কথা শুনে মাশরাফী সেই সর্বনাশা ইনজুরিকেই দুষলেন, ‘ইনজুরির কারণে ব্যাটিং নিয়ে আলাদা কাজ করার তেমন সুযোগ হয়নি। যতটুকু সময় পাই তার বেশিরভাগ সময়ই কাটে ফিট থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। ইনজুরির কারণে সবসময় মনোযোগ বোলিংয়ের ওপরই থেকেছে। ব্যাটিংয়ে বাড়তি কাজ করলে ব্যাটিং ভাল হয় বা বাড়তি কাজ করলে বোলিং ভাল হয়। সেই বাড়তি কাজটা আমি বোলিংয়েই করেছি। আমি বোলিংটা নিয়েই যত্নবান থেকেছি। অর্ধেক ব্যাটিং করলাম অর্ধেক বোলিং করলাম, এরকম খেলোয়াড় হতে চাইনি।’
‘ইনজুরি না হলে হয়ত বাড়তি সময় আমি ব্যাটিং নিয়ে কাজটা করতাম। এখন বাড়তি সময় পেলে জিমের কাজটা করতে হয়। একটু রানিং, সাইক্লিং করতে হয়। ইনজুরির জন্যই ব্যাটিং নিয়ে কাজ করা হয় না আসলে।’
এতকিছুর পরও মাশরাফী বলতে পারেন, ‘তবু চেষ্টা করছি টিমকে ব্যাটিং করে যতটুকু সাহায্য করা যায়। দেখা যাক সামনে কী হয়।’ মাশরাফী সামনে তাকিয়ে। পেছনে?
ইতিহাস। অসময়ের সঙ্গে যুদ্ধের ইতিহাস। আর এক মহানায়কের গল্পগাথা।
দেখুন ভিডিওতে: