সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলোয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) একাধিক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এনএসইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম নর্থ সাউথকে দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে বলেন ‘৫-৬ বছর আগের শিক্ষার্থীদের জঙ্গি হওয়া নিয়ে নর্থ সাউথকে দোষারোপ করা হচ্ছে’। গুলশান হামলার পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শির্ক্ষাথীদের জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে ভিসি বলেন,‘গণমাধ্যম যা খুশি বলুক’।
তবে এমন মন্তব্য করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ ছড়ানো বন্ধে এনএসইউ’র উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা, যুক্তরাষ্ট্রে হামলার চেষ্টা, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িতদের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম চলে আসাতে ভাবমূর্তি রক্ষার পদক্ষেপ নিয়েছে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরই অংশ হিসেবে ২২ ও ২৩ জুলাই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেছে এনএসইউ প্রশাসন। প্রথমদিনের মতবিনিময় কর্মসূচিটি ফেসবুক লাইভে সম্প্রচারতি হয়।
এই মতবিনিময় সভায় নর্থ সাউথের ভিসি অভিভাবকদের বলেন,‘ এনএসইউ সম্পর্কে সব সংবাদ বিশ্বাস করবেন না। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের যে সময়টা আমাদের এখানে কাটাবে তখন আমরা নজর রাখবো। শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডও পর্যবেক্ষণ করা হবে। ‘মগজধোলাইয়ের’ সুযোগ দেয়া হবে না’।
নর্থ সাউথ এক নম্বর:
বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়তে দিয়ে এখন চরম শঙ্কায় থাকা অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে এনএসইউ’র ভিসি বলেন,‘ আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা-পড়াশোনা করছে, কাজ করছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। আমাদের একটি ছাত্রও নাই যে এখনো চাকুরি পায়নি। আমাদের শিক্ষকদের সবাই বিদেশি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। আমাদের এখানে বিদেশ থেকে শিক্ষক আসেন। আমরা বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনারা বাংলাদেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাদের সন্তানদের পাঠিয়েছেন।’
অভিভাবকদের সামনে ক্যাম্পাসের অন্যান্য সুবিধা নতুন করে তুলে ধরে নর্থ সাউথের ভিসি বলেন,‘ পুরো ক্যাম্পাস ওয়াই-ফাই, যেকোনো কোণায় বসে ল্যাপটপ চালানো, ট্যাব চালানো যায়। এখানে ২৫ টি স্টুডেন্ট ক্লাব আছে। রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনকে আমরা অনুমোদন দেই না’।
মসজিদ না ‘প্রেয়ার রুম’:
মতবিনিময় সভায় উপাচার্য মূল বক্তব্য উপস্থাপনের আগে বক্তব্য রাখেন এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন,‘ অভিযোগ করা হচ্ছে এখানে মসজিদ আছে বলে নাকি জঙ্গি হচ্ছে।’
কে বা কারা এই অভিযোগ তুলছে তা উল্লেখ না করে তিনি বলেন,‘ মসজিদ আছে কারণ আমরা মুসলমান’।
তার এই বক্তব্যের পর ভিসি’র দেয়া ভাষণে বলা হয়,‘ আমাদের প্রেয়ার রুম (প্রার্থনা কক্ষ) আছে , মসজিদ-মিম্বর নেই’।
চিন্তিত নই:
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়িত নয় দাবি করে তিনি বলেন,‘ এখানে কোনো উগ্রপন্থী প্রচারপত্র বিলি হয় না। জঙ্গিবাদের তালিম দেয়া জায়গা নয় এটা। গ্যারান্টি দিচ্ছি আমাদের শিক্ষকরা তা করবেন না। অবশ্য এ ব্যাপারে আমরা চিন্তিত নই, আমাদের শিক্ষকরা সেরকম নন’।
জঙ্গিবাদের অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুলশান হামলার পর এনএসইউ পিছিয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করেন ভিসি আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন,‘ জঙ্গি হামলা আমাদের পিছিয়ে দিলো। বিদেশী যে শিক্ষার্থীদের আসার কথা ছিলো তারা আসেনি’।
অচলাবস্থা দূর করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে অভিভাবকদের সামনে কিছু উদ্যোগ তুলে ধরেন নর্থ সাউথের ভিসি।
মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বিভাগ: ভিসি জানান,বিশ্বমানের ক্যাম্পাস গড়তে এবং আবাসন সমস্যা দূর করতে রাজধানীর পূর্বাচলে ২’শ ৫০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। বসুন্ধরার বর্তমান ক্যাম্পাসের আশেপাশে অর্থাৎ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বিশেষ একটি বিভাগ খোলার ঘোষণা দেন তিনি।
মাদ্রাসার ছেলেদের কম্পিউটার নাই:
অভিভাবকদেরকে সন্তানের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখার আহ্বান জানান নর্থ সাউথের ভিসি। তিনি বলেন,‘ মাদ্রাসার ছেলেদের কম্পিউটার নাই, কিন্তু আপনার সন্তানদের আছে। অভিভাবকরা খেয়াল রাখবেন সন্তান যেনো দরজা না আটকায়। তরুণ বয়সে সবাই বিপ্লবী হতে চায়, বিপ্লব করার কারণ খুঁজে বেড়ায়। এখন অনলাইনে তারা ইরাক-সিরিয়ায় কারণ খুঁজছে। এই ছেলেগুলোকে বেহেশত এবং ৭০ হুরের লোভ দেখিয়ে বিপথে নেয়া সহজ। সন্তানের হঠাৎ পরিবর্তনগুলোকে নজরে আনুন। জঙ্গিবাদ থেকে তাদের দূরে রাখতে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো’।