সিনেমা জগতে মহামারীর প্রভাব ব্যাপক। বিশেষ করে ভারতে সিংহভাগ সিনেমা হল আবারও বন্ধ হয়ে গেছে। শুটিংও থেমে গেছে। সীমিত পরিসরে যতটুকু শুটিং হচ্ছে, সেখানেও মানতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। নিষেধাজ্ঞা আছে জনবহুল দৃশ্য এবং ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও।
একটা সময় ছিল যখন নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত বোঝাতে দেখানো হতো দুটি ফুল। করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু সব ধরনের সতর্কতা মানতে হবে, তাই অনেকেই মজা করে প্রশ্ন তুলছেন, আবারও কি ফুলের যুগে ফিরে যাবে বলিউড?
কারণ, কদিন আগের চুমুর দৃশ্যগুলোই এখন অতীত মনে হয়। এমনও হতে পারে যে করোনা নির্মূল হলেও এখনের অভ্যাসটা রয়ে যাবে নির্মাতাদের মাঝে। তারা হয়তো ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছাড়াই নির্মাণ করবেন সিনেমা। জেনে নিন এই প্রসঙ্গে ভারতীয় সিনেমা সংশ্লিষ্টরা কে কী ভাবছেন।
সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি অমিত বেল বলেন, ‘কন্টেন্টগুলো বোল্ড হয়ে উঠছে। কিন্তু এখন মহামারী চলছে। তাই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের আগে শিল্পীরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা তা জেনে নেয়া উচিত। কিন্তু প্রতিটি ছবির ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত করা কঠিন। এজন্য কস্টিউম ডিজাইনার, কোরিওগ্রাফারের মতো একজন ইন্টিমেসি কোঅরডিনেটরও প্রয়োজন, যিনি এসব বিষয় তদারকি করবেন।’
নির্মাতা বিক্রম ভাট বলেন, ‘ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নানা রকম হয়। হাত ধরায় ঝুঁকি নেই কিন্তু চুমু এড়ানোই ভালো। আমি মনে করিনা এই বিষয় কোনো নিয়ম থাকা উচিত। কারণ সিনেমার ওপর নির্ভর করে বিষয়টি। তবে শিল্পী ও নির্মাতারা যদি সচেতন না থাকেন, তাহলে স্বাভাবিক দৃশ্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’
মনীষা বসু বলেন, ‘এখন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের আগে শিল্পীদের করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেয়া বাধ্যতা মূলক। তবে ছবির কাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ না হলে আমরা এখন চুমুর দৃশ্য এড়িয়ে চলছি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য।’
লেখিকা জুহি চতুর্বেদী ‘ভিকি ডোনর’, ‘পিকু’, ‘গুলাবো সিতাবো’র মতো ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। তিনি মনে করেন এখন ঘনিষ্ঠ দৃশ্য না রাখাই ভালো। সব কিছুরই সময় আছে। অপেক্ষা করা উচিত আরও। তার মতে, সিনেমায় শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ছাড়াও শুধু মাত্র সংলাপের মাধ্যমেও সম্পর্কের উষ্ণতা বোঝানো সম্ভব।
তবে স্ক্রিন রাইটার সঞ্জয় চৌহান বলেন, ‘ভিন্ন ভাবে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখানো সম্ভব নয়। আমরা তো আর পুরনো দিনের মতো দুটি ফুল দিয়ে চুমুর দৃশ্য দেখাতে পারি না তাই না?’
অভিনেত্রী মাহি গিলও মনে করেন, করোনাকালে শিল্পীদের নিরাপত্তার খাতিরে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য এড়ানোই ভালো। তিনি জানিয়েছেন, এধরনের দৃশ্যে অভিনয় করবেন না আপাতত।
অভিনেত্রী কবিতা রাধেশ্যাম অবশ্য মনে করেন, বিনোদনের অন্যতম অংশ হলো রোমান্স। তাই সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমার প্রয়োজনে রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করতে আপত্তি নেই তার। কারণ মানুষ তো চুমুর কারণে মারা যাচ্ছে না, মারা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসে।’
ইন্টিমেসি কোঅরডিনেটর আশা খান্না মনে করেন, অন্তরঙ্গ দৃশ্যের মতো অন্য দৃশ্যও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোনো দৃশ্যেই তো শিল্পীরা মাস্ক পরে থাকেন না। তাই সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। করোনাকালের আগেও ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের আগে শিল্পীদের সম্মতি নেয়া হতো। মহামারীতে কোনো শিল্পী যদি এধরনের দৃশ্যে অভিনয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, তাহলে সেই দৃশ্য বাদ দেয়া হয়।