রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়ে কিছুদিন যাবত। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আংশিক কার্যক্রম চালু ছিল, কিন্তু সম্প্রতি পুরোদমে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চালু হওয়াকে অনেকে যানজট বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করছে।
সড়কগুলোতে যানবাহনের জটলা ও ট্রাফিক সিগন্যালে বসে থাকতে থাকতে পথচারী ও যাত্রীদের ক্লান্তি-ভোগান্তি চরমে উঠেছে। যাত্রী ও পথচারীদের অনেকের অভিযোগ, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একযোগে সড়ক নির্মাণ, মেট্রোরেল ও বাস র্যাপিড ট্রানজিটের কাজ চলছে। এজন্য যানবাহন চলাচলে খুব ধীরগতিতে চলছে। এছাড়াও সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। তবে, সেই অনুযায়ী সড়ক ব্যবস্থা নেই। বাসগুলো সড়কের মধ্যে থেমেই যাত্রী ওঠা-নামা করায়। দূরপাল্লার গাড়িগুলোও রাজধানীর সড়কে পার্কিং করা থাকে। এ কারণে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটে বসে থাকতে থাকতে মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বহু মূল্যবান সময়।
এছাড়া একই রাস্তায় দ্রুতগতির ও ধীরগতির পরিবহন চলাচল, শহরের মধ্যে রেলক্রসিং, ভিআইপি মুভমেন্ট, পার্কিং, ট্রাফিক সিস্টেম ও সড়ক অব্যবস্থাপনার কারণেও রাজধানীর যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এসব দিকে নজর দেয়া খুবই জরুরি।
ঢাকা শহরের যানজটের কারণ কী- এ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। যানজট নিরসনে নেয়া নানা পরিকল্পনা সত্ত্বেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ট্রাফিক পুলিশ, নগরবিদ, গবেষক ও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, রাজধানীর যানজট সমস্যায় যাই প্রয়োগ করা হোক না কেন, তা কাজে আসছে না। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছেন, সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন অথরিটির সমন্বয়হীনতা। যে যার মতো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। ফলে তা কাজে না এসে উল্টো আরও সঙ্কট সৃষ্টি করছে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, সড়কে গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত যানবাহনের পরিমাণ বেড়েছে। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলেরের চাপ অনেক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো এলাকায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৯টি ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন করা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে নিবন্ধন নিয়েছে ২ হাজার ৭২৪টি ব্যক্তিগত গাড়ি। এই হিসাবে প্রতিদিন ঢাকায় অন্তত ৪৬টি নতুন গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। আর মিরপুর সড়ক নিয়ে রাজউকের করা একটি সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ৭৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ সড়ক দখলে রাখে ব্যক্তিগত গাড়ি। এসব গাড়িতে যাত্রী পরিবহন করা হয় মোট যাত্রীর প্রায় ২৫ শতাংশ। আর ঢাকার সড়কের মাত্র ১ শতাংশ দখলে রাখে বাস। অথচ প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে এই বাস।
এছাড়া দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর যেসব এলাকায় সিগন্যাল বেশি সেসব এলাকায় যানজট তত বেশি। ওয়াসা, তিতাস, সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থা সমন্বয় করে কাজ না করায় সড়কে খানাখন্দ আর যানজটে নাকাল নগরবাসী। রাত ১০টার আগে মালবাহী ট্রাক রাজধানীর রাস্তায় ঢুকতে সিটি কর্পোরেশন থেকে নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
গরম আর বৃষ্টির সিজনের শুরুতে রমজান মাস আসন্ন, এসময়ে যানজট আরও প্রকট হয়। মানুষের ভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ খুবই জরুরি।