তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল না হলে কলম পেশা হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছে সাংবাদিক নেতারা। আর আইনজীবীরা বলছেন, সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে এই ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক।
১১ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘একটি অসুস্থ শিশু, বিচারকের ট্রাক ও একটি মামলা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বিচারক মাহবুবুর রহমানের বাড়ি বদলের ট্রাকের কারণে একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথ আটকে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুবর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক ধ্রুবর বিরুদ্ধে দায়ের করা আইসিটি মামলা প্রত্যাহার না হলে আগামী রোববার তথ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘সাংবাদিক ধ্রুবর বিরুদ্ধে বিচারকের দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে’ আয়োজিত মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি দেয় সাংবাদিকরা।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা শুধু সাংবাদিকদের নিপীড়ন-নির্যাতন করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে এই ধারা রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, মাদক ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে।
মানববন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ বলেন: এটা সাংবাদিক সমাজের বিরুদ্ধে মামলা। ৫৭ ধারা বাতিল না হলে কলম পেশা হুমকির মুখে পড়বে। অবিলম্বে এই কালো আইন বাতিল করতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ৫৭ ধারা বাতিল করার দাবি করে আসছি। ধ্রুবর মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি তার পাশে থাকবে।
অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন-ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন: ৫৭ ধারায় মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা। ৫৭ ধারা কালো আইন। সে আইনে একজন বিচারক কীভাবে মামলা করেন।
সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক। মানুষকে ভয় দেখাতে কিংবা আতঙ্কিত করতে এই ৫৭ ধারা ব্যবহার করা হয় বলে জানান সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী স্বর্ণকান্তি দাস চৌধুরী।
৫৭ ধারার অপব্যবহার বিশ্লেষণ করে স্বর্ণকান্তি দাস চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু অস্পষ্টতা দেখা যায়। ৫৭ ধারায় “ইচ্ছাকৃতভাবে” একটি শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে, আমার মতামত যে, এই “ইচ্ছাকৃতভাবে” শব্দটি কিভাবে তদন্ত করে প্রমাণ করা সম্ভব? তাই এই শব্দটি খুবই বিপদজ্জ্বনক কারণ, আজকালকের কিছু ঘটনায় দেখা যাচ্ছে হ্যাকিং করে অন্যের নামে কুৎসা রটিয়ে আরেকজনকে অপরাধে যুক্ত করা হচ্ছে যদিও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি হয়তো তার কিছুই অবহিত নন। সেহেতু হয়রানির সুযোগ বিদ্যমান।
তিনি আরো বলেন: এই আইন তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আইনগত বৈধতা ও নিরাপত্তা প্রদান এবং আনুষাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন” কিন্তু এই আইনেরই ৫৭ ধারার যথেচ্ছা ব্যবহার হেতু এই আইন তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতে বিচ্যুত হয়েছে অপরাপর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯(১) এর সাথে সাংঘর্ষিক, তাই আইনটি সামাজিক বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। ইদানিং কিছু কার্যকলাপে এই বিষয়টি প্রতিয়মান হয়, এই আইন দিয়ে হয়রানিই বেশী হচ্ছে। কারণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ইং (সংশোধিত, ২০১৩) এর ৫৭ ধারার বেশ কিছু বিষয় অসংজ্ঞায়িত, যা বিপদজ্জ্বনক।
“অনুচ্ছেদ ৩৯(২) খ তে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথাও বলা আছে যার মানে সাংবাদিকসহ সকলের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা, কিন্তু এই আইন দ্বারা সাংবাদিকরাও অবরুদ্ধ।”
সাংবাদিক ধ্রুব বিরুদ্ধে মামলাটি বর্তমান কি অবস্থায় রয়েছে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।বর্তমানে তা তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মামলাটির বাদি মানিকগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে তার মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।