আগস্ট আসলেই বিএনপি অন্তর্দহনে দগ্ধ হয় জানিয়ে পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি ঘাতকদের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা।
আজ রোববার বিকেলে নগর ভবন প্রাঙ্গণে ‘জাতীয় শোক দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগস্ট আসলেই বিএনপি নামক একটি দল অন্তর্দহণে দগ্ধ হয়। ১৫ অগাস্টের ঘটনা, খুনীদের পুনর্বাসন ও মোস্তাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানে যুক্ত করার ঘটনা বিএনপি শত চেষ্টা করেও এই নির্মম সত্য ঢাকতে পারবে না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা বিএনপি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি প্রমাণ করেছে ১৫ আগস্টের হত্যাকারীরা বিএনপির আশ্রয়ের ঠিকানা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মদদ দিয়ে প্রমাণ করেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্থার ঠিকানা বিএনপি।’

তিনি বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সেই দেশের রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করা হলেও ১৫ আগস্টের মত এত বর্বর ও নির্মম হত্যাকাণ্ড আর হয়নি। নিষ্পাপ শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করা হয়নি। ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এ দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল ছিল বিএনপি তা তুলে ফেলেছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘‘মায়ের সাথে সন্তানের কত স্মৃতি থাকে ভালোবাসার, আদরের, এমনকি যদি বকাঝকাও হয়। আমি ৪৬ বছর ধরে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে দেখলাম, আমার মায়ের স্মৃতি কোনও পেলাম না। একমাত্র স্মৃতি সেই বেদনার স্মৃতি বাবার লাশটি পড়ে আছে।সিঁড়ির মেঝের উপরে। বাবা একটি সাদা হাতাকাটা গেঞ্জি পরা। বাবার গলায় একটি গুলি লেগেছিল। বাবা-মা’কে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তখন সেই সিঁড়ির মেঝের অনেক রক্ত জমাট। এই বেদনার স্মৃতি নিয়ে ৪৬ বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’’
শেখ তাপস বলেন, ‘‘আজকাল অনেকেই আমাদেরকে পরামর্শ দেন, বুদ্ধি দেন, (তারা) বুদ্ধিজীবী না জ্ঞানপাপী সেটা জনগণই ভালো বিচার করতে পারবেন। (তারা) বলেন, জিয়াউর রহমানকে টানে কেন? জিয়াউর রহমানকে আমরা টানি না। খুনি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে সেটা সাক্ষ্যপ্রমাণে এসেছে। আপনারা আর কতদিন ধামাচাপা দেবেন? জিয়াউর রহমান মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আজ ফারুক, শাহরিয়ার, মইনুদ্দিন এর সাথে জিয়াউর রহমানকেও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হতো, ফাঁসির রায় কার্যকর হতো।’’
জিয়াউর রহমানের জন্য ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফ নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল জানিয়েন ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফের কাছে তার অধঃস্তন সেনা কর্মকর্তা মেজর বজলুর রশিদ এসে জানালেন আমরা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই। আপনি আমাদের সাথে আছেন কিনা? জিয়াউর রহমান বললেন আমি তো কিছু করতে পারব না, তোমরা করো। ইউ গো এহেড। আইনের ভাষায় আমি কিছু করতে পারব না তোমরা করো মানে হলো, আমার ইচ্ছা আছে আই হ্যাভ দ্য ইনটেনশন। আর অধঃস্তন কর্মকর্তা হয়ে তাকে জানিয়ে সুন্দরভাবে সেখান থেকে চলে গেল, আর ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফ হয় আপনি কোন ব্যবস্থা নিলেন না? আপনি কর্নেল তাহেরকে ছাড়েন নাই। মার্শাল ল কোর্ট বসিয়ে ফাঁসি দিলেন। আর মার্চ থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত সেসব অধঃস্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আপনি একটি উচ্চবাচ্যও করলেন না। সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের কিছু বললেন না জানালেন না।’’
জিয়াউর রহমান সেসব অধঃস্তন কর্মকর্তাদেরকে দিয়েই কর্নেল মাইনুদ্দিন ও কর্নেল শাফায়াত জামিলকে হাউস অ্যারেস্ট করিয়েছিলেন বলে জানান ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস।
ঢাদসিক মেয়র এসময় প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমান যদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকতেন, তাহলে কেন এসব হত্যাকারী কুলাঙ্গার কর্মকর্তাদের দূতাবাসে পাঠালেন? তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করলেন? আপনার প্রতিষ্ঠা করা দল এখনও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে এবং আপনার জীবদ্দশায় আপনি কোনদিন বলেন নাই না, আমি এসবের সাথে জড়িত ছিলাম না, বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত ছিলাম না। তাই সকল ঘটনা প্রবাহ, তথ্য-প্রমাণ বলে আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সুতারাং তাই আমি এতিম সন্তান মৃত্যুর সময় পর্যন্ত বলে যাবো জিয়াউর রহমান খুনি, জিয়া রহমান খুনি, জিয়াউর রহমান খুনি।’’