বুধবার আবারও আসছে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। তবে সুমাত্রা, বোর্নিও, সুলাওয়েসিসহ ইন্দোনেশিয়ার আরো কিছু অঞ্চল এবং প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হলেও বাংলাদেশ থেকে আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে।
এবারের সূর্যগ্রহণটি যদি না দেখতে পারেন তাহলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে আরো সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময়। কারণ বুধবারের পর বাংলাদেশ থেকে আবার ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।
বুধবার গ্রহণযুক্ত অবস্থায় বাংলাদেশে সূর্যোদয় ঘটবে। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর থেকেই আংশিক গ্রহণটি দেখা যাবে এবং তা সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট স্থায়ী হবে। ঢাকায় স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ১২ মিনিটে সূর্য ওঠার পর থেকে গ্রহণ শুরু হয়ে ৭টা ২১ মিনিট ৭ সেকেন্ডে গ্রহণ শেষ হবে। আংশিক সূর্যগ্রহণের সর্বোচ্চ পর্যায়টি ঘটবে সকাল ৬টা ৩৮ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে।
বাংলাদেশ ছাড়াও আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ও পূর্বাঞ্চল, হাওয়াই ও আলাস্কা থেকে।
সূর্যগ্রহণ নিয়ে যতো কুসংস্কার: কুসংস্কার নিয়ে বিশ্বব্যাপী নানা ধরণের অদ্ভুত সব কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নেই। শুধু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল নয়, শহরের উচ্চশিক্ষিত অনেকেই এখনো এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করেন। এর মধ্যে রয়েছে:
– গ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়েরা কোনও কিছু খেলে সন্তান পেটুক হয়;
– এ সময় কিছু কাটলে, বিশেষ করে মাছ কাটলে ঠোঁট কাটা, কান কাট বা নাক কাটা সন্তানের জন্ম হয়;
– এ সময় গাছের ডাল ভাঙলে বা বাঁকানোর চেষ্টা করলে হাত-পা বাঁকানো (পোলিও) সন্তানের জন্ম হয়;
– গ্রহণের সময় খেতে নেই, তৈরি করা খাবারও ফেলে দিতে হয়;
– গ্রহণের সময় প্রকৃতিতে কঠিন সব রোগ-জীবাণুর উদ্ভব হয়;
– এ সময় অশুভ শক্তিরা বেরিয়ে আসে।
এমনকি গ্রহণ দেখাও নিষেধ অনেকের কাছে। আরো রয়েছে বিভিন্ন ধারণা। সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যকে ‘রাহু’ গিলে ফেলে, তাই এসব সাবধানতা মেনে না চললে অমঙ্গল হতে পারে – এমনটাই ধারণা অনেকের।
কতটা বাস্তব? এসব কুসংস্কারের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। সূর্যগ্রহণ প্রকৃতির এক অসাধারণ ঘটনা। তাই এ সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণকে আগ্রহী করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যগ্রহণ দেখার আয়োজন করা হচ্ছে। এমনই এক আয়োজক সংস্থা অনুসন্ধিৎসু চক্র।
অনুসন্ধিৎসু চক্রের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, ‘সূর্যগ্রহণ আসলে আপনি নিজের বাসার বারান্দায় বসেও দেখতে পারেন। শুধু খালি চোখে না দেখে এক্স-রে প্লেট বা বিশেষ চশমা ব্যবহার করে বা অন্য নিরাপদ উপায়ে দেখতে হবে। আমরা শুধু আয়োজনগুলো করি যেনো জ্যোতির্বিজ্ঞানের এই সুন্দর ঘটনাটি সবাই দেখতে আগ্রহী হয়।
এছাড়াও আমাদের আয়োজনগুলোতে বিশেষভাবে চোখ নিরাপদ রেখে গ্রহণ দেখার ব্যবস্থা করা হয়, কুস্ংস্কার দূর করার পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য জানানোর চেষ্টা করি আমরা।’
মৃধা বেনু জানান, অনুসন্ধিৎসু চক্রের কেন্দ্রীয় আয়োজনটি রাজধানীর মুগদা এলাকার পূর্বদিকে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের গ্রিন সিটিতে করা হয়েছে। দিগন্তরেখা থেকে গ্রহণ দেখার জন্যই আয়োজনটি ওখানে করা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিকভাবে সূর্যগ্রহণ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে হয়: আমরা সবাই জানি সূর্যের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবী ঘোরে। আর পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ ঘোরে পৃথিবীর চারিদিকে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ যখন কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোনো দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক আবার কারো কাছে সম্পূর্ণরূপে চাঁদের পেছনে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটা নির্ভর করে পৃথিবীর কোথা থেকে সূর্যকে দেখা হচ্ছে তার ওপর।
এই ঘটনাকেই সূর্যগ্রহণ বলা হয়। অমাবশ্যার পর নতুন চাঁদ ওঠার সময় এ ঘটনা ঘটে। পৃথিবীতে সাধারণত প্রতি বছর অন্তত দুই থেকে পাচঁটি সূর্যগ্রহণ হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দু’টি গ্রহণ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। কখনো আবার পুরো বছরে একটা গ্রহণও পূর্ণ গ্রহণ হয় না।
পূর্ণ সূর্যগ্রহণে সূর্য পুরো ঢাকা পড়ে যায় বলে সৌরমুকুট (corona) দেখা যায়। একে দেখতে একটা হীরের আংটি বা বলয়ের মতো লাগে। আর আশপাশের এলাকা থেকে দেখা যায় আংশিক গ্রহণ।