ঢাকা মেডিকেল কলেজে জোড়া লাগা জমজ শিশু তোফা-তহুরার অস্ত্রোপচার করার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আশা জোরালো হওয়ায় তাদের মা শাহিদা এবং বাবা রাজু মিয়া মন থেকে কেটে গেছে শঙ্কার মেঘ।
তোফা-তহুরার জন্মের পর থেকে অনেকের অনেক ধরনের কথা শুনতে হয়েছে তাদের। ‘কটু কথা’ বলতে ছাড়েননি নিকট আত্মীয়রাও। তবে নিজেদের সন্তান নিয়ে মোটেই অখুশী ছিলেন না তারা। জন্মের পর থেকেই তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টার কোন কমতি ছিল না তাদের।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জোড়া সন্তানের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেয় সরকার। আশার হালে পানি পায় দরিদ্র পরিবারটি। শেষ পর্যন্ত অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে তোফা-তহুরা।
গত মঙ্গলবার পিঠের দিক থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত মেরুদণ্ডের হাড় সংযুক্ত থাকা দশ মাস বয়সী তোফা-তহুরার অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে কিনা তা বলার সময় এখনও আসেনি বললেও আলাদা হওয়ার পর তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থায় খুশি ডাক্তাররা।
আলাদা হওয়ার পর তোফা ও তহুরা আইসিইউ’র পোস্ট অপারেটিভ রাখা হয়েছে। তাদের বাবা মা থাকছেন ৬৮ নম্বর কেবিনে। সেখানে কথা হয় তোফা ও তহুরার মা-বাবা এবং নানার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। শাহাদাৎ নামে তোফা-তহুরার পাঁচ বছর বয়সী বড় ভাই রয়েছে।
তোফা ও তহুরা মা শাহিদা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অপারেশনের পর আমার বাচ্চারা ভালো আছে, এটা একজন মায়ের জন্য কত বড় আনন্দের সেটা বলে বোঝানো যাবে না। দোয়া করবেন যেন পড়াশোনা শিখিয়ে ওদের মানুষের মত মানুষ করতে পারি।
কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারদেরও বিশেষ করে যার নেতৃত্বে অপারেশন হয়েছে শিশু বিভাগের সেই সহযোগী অধ্যাপক সাহনুর ইসলামকে।
‘সাহনুর ম্যাডাম নিজের সন্তানের মত আমার সন্তানদের যত্ন নিচ্ছেন। অন্য ডাক্তাররাও খুব ভালো।’
তবে নিজের মনে কোন দুঃখ না থাকলেও অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কটু কথা শুনিয়েছেন নিকট আত্মীয়রাও। তবে কারও প্রতিই কোন ক্ষোভ নেই বলে জানান শাহিদা।
কথা বলতে বলতেই আইসিইউ থেকে ফোন আসে রাজু মিয়ার ফোনে, বাচ্চারা কাঁদছে তাদের দুধ খাওয়াতে হবে।
ফোনটা পেয়ে রাজু মিয়া এতটাই আপ্লুত হন যে এই প্রতিবেদকের কানে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলেন: শোনেন, আমার মেয়েরা কাঁদছে, দুধ খেতে চাইছে!’
তারাহুরো করে তৈরি হয়ে শাহিদা ছোটেন পোস্ট অপারেটিভ বিভাগের দিকে।
যার নেতৃত্বে এই বিশাল অপারেশন যজ্ঞ সেই ডাক্তার সাহনুর ইসলামও জানালেন স্বস্তির কথা।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: এই অপারেশন ছিল একটা টিমওয়ার্ক। আমি হয়তো নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু আমার সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মীদের সহযোগিতা ছাড়া তা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।’
বাচ্চারা এখন ভালো আছে এবং স্বাভাবিক খাবার গ্রহন করছে বলেও জানান ড. সাহনুর ইসলাম।