মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে সবচেয়ে ভারি রকেট ‘ফ্যালকন হেভি’ সফলভাবে উড্ডয়ন করাতে সক্ষম হয়েছে এলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
২৭ ইঞ্জিনের এ রকেটটি ৬৪ টন ওজন নিয়ে মহাশূন্যে পাড়ি দিতে সক্ষম। তবে প্রথমবারের এ পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা একটি টেসলা রোডস্টার গাড়ি নিয়ে রকেটটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মাস্ক। গাড়ির চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে স্পেস স্যুট পরিহিত ডামি নভোচারীকে।
আজকের এ সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটের আসনও দখল করে নিলো ফ্যালকন হেভি।
রকেটটির সফল উড্ডয়ন শেষে এলোন মাস্ক সাংবাদিকদের জানান, নতুন প্রযুক্তির কোনো রকেট তৈরির পর প্রথমবারেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০। ‘আমার চোখে শুধু একটা ছবিই ভাসছিল- লঞ্চপ্যাডে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ, একটি চাকা গড়িয়ে রাস্তার দিকে চলে আসছে। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে এমন কিছুই ঘটেনি।’, বলেন মাস্ক।
রকেটটি উৎক্ষেপণের কিছু সময় পর টেসলা গাড়ি ও এর যাত্রীকে সূর্যকে ঘিরে থাকা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে রেখে আবার ফিরে এসেছে রকেটের দুটি আউটার কোর (বুস্টার ইঞ্জিন) এবং রকেটের মূল ইঞ্জিন। দুটি আউটার কোর কেনেডি স্পেস সেন্টারে ঠিকভাবে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে মেইন কোরটির অবতরণের কথা ছিল আটলান্টিকে থাকা একটি ড্রোন শিপে।তবে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা এই কোরটি প্রপেলার সংকটের কারণে গতি কমাতে ব্যর্থ হয় এবং সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
যে কক্ষপথে রকেটটি এখন অবস্থান করছে, ওই কক্ষপথ ধরেই মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানো সম্ভব। মূলত মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর যে লক্ষ্য রয়েছে এলোন মাস্কের, সেটি বাস্তবায়নের পথেও আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি।
রকেটটি উৎক্ষেপণের ৬ ঘণ্টা পর একটি টুইট বার্তায় এলোন মাস্ক জানান, এর উপরের অংশে থাকা ইঞ্জিন চালু হয়েছে এবং মঙ্গলের কক্ষপথ অতিক্রম করে অ্যাস্টেরয়েড বেল্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট হলো মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে প্রায় ৪৫ হাজার গ্রহাণুর একটি স্তর।
এই রকেটটির মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারের স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো সম্ভব হবে। বর্তমানে রকেটের আকারের উপর ভিত্তি করে স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে ইউএস এয়ার ফোর্স এ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘোষণা দিয়েছে। এর বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার যে পরিকল্পনা রয়েছে মাস্কের, তারও বাস্তবায়ন ঘটানো সম্ভব হবে এর মাধ্যমে।
২০১১ সালে প্রথম ফ্যালকন হেভি তৈরির ঘোষণা দেয় স্পেস এক্স। ২০১৩ সালের মধ্যে রকেটটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে, এমনটি বলা হয়েছিল তখন। তবে এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে রকেটটি উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয় স্পেস এক্স। আরও একদফা সময় পরিবর্তনের অবশেষে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাশূন্যে গমন করতে সক্ষম হলো ফ্যালকন হেভি।