লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেছেন: মালিক কিংবা যারাই দায়ী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মালিকসহ যারা ছিল তাদের দুর্বলতা ছিল প্রতিবেদনে। লঞ্চটি নির্মাণের মধ্যেও দুর্বলতা ছিল বলে বলা হয়েছে। মালিক হোক বা যারাই দায়ী হোক সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এতগুলো মানুষের জন্য যে যানবাহন সেসব যানবাহনে কেন ইনস্যুরেন্স নাই সেটা নিয়ে জবাবদিহিতার আওতায় আসবে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইঞ্জিনে সমস্যা ছিল বলে জানা গেছে, এটার জন্য ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ দায়ী। এজন্য তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় নজরদারি করলেও এরা তা মানছেনা।

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’-এ আগুনে হতাহতের ঘটনায় লঞ্চটির চারজন মালিক, মাস্টার, সার্ভেয়ার ও চালককে দায়ী করে সোমবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কমিটি।
কমিটির আহ্বায়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. তোফায়েল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন।
প্রতিবেদনে সদরঘাটে কর্মরত নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ২৫ দফা সুপারিশ ও করণীয় দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি চাঁদপুর ঘাট অতিক্রম করার পর ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। ইঞ্জিনের ত্রুটি সারতে ব্যর্থ হওয়ায় লঞ্চটি আর না চালিয়ে নিরাপদ কোনো ঘাটে আগেই ভেড়ানো উচিত ছিল। অনেক যাত্রী লঞ্চটি ভেড়ানোর অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু মাস্টার ও ইঞ্জিন চালক এ বিষয়ে কর্ণপাত না করে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চটি চালাতে থাকেন।
লঞ্চে লাগা আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন লাগার পর লঞ্চটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আনুমানিক ১৫ মিনিট চলার পর ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চর বাটারাকান্দা গ্রামে নদীর পাড়ে লঞ্চটি ভেড়ে। এখানেই লঞ্চের প্রথম শ্রেণির ইঞ্জিন ড্রাইভার মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় শ্রেণির ইঞ্জিন ড্রাইভার আবুল কালাম ও কর্মরত গ্রিজাররা (ইঞ্জিনকক্ষের সহকারী) পালিয়ে যান। নোঙর করা বা লঞ্চটি বাঁধার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও সে চেষ্টা করা হয়নি।
লঞ্চটি প্রথম যেখানে ভিড়েছিল, সেখানে নোঙর না করায় বা বেঁধে না রাখায় জোয়ারের কারণে সেটি পুনরায় মাঝনদীতে চলে যায়। লঞ্চটি পুড়তে পুড়তে প্রায় ৪০ মিনিট পর নদীর অপর পাড়ের দিয়াকুল গ্রামে ভেড়ে। এই সময়ে অনেক যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হন। অনেকে নদীতে লাফ দেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।