মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো বর্বরতাকে চরম গণহত্যা বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। একই সাথে সে দেশের সেনাদের অত্যচার নির্যাতন বন্ধে অবিলম্বে জাতিসংঘ থেকে মিয়ানমারে শান্তিরক্ষী পাঠানোর দাবি করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উখিয়ার বালুখালিতে জাতীয় পার্টি আয়োজিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও সমাবেশে এই সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি একথা বলেন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে কক্সবাজারের স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জাইদ রাদ আল হুসেইন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছেন।
“আপনারা নির্যাতিত, যতদিন ফিরে যাবেন না, ততদিন এদেশের মানুষ আপনাদের পাশে আছে, থাকবে।” এরশাদ উপস্থিত নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে আজ একথা বলেন। পরে তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
টেকনাফ উপজেলা জাপার সভাপতি শফিক আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য মফিজুর রহমান, জেলা সভাপতি মো. ইলিয়াছ এমপি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।