মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির কাছে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু নৃ-গোষ্ঠীর জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
বুধবার সু চি’কে ফোন করে এ কথা বলেন তিনি। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিটি ট্রুডো নিজের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেছেন।
কথা বলার সময় ট্রুডো বারবার নৈতিক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে একজন স্টেট কাউন্সিলরের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নেতাদের এখন জরুরি ভিত্তিতে রাখাইনে চলমান সহিংসতা বন্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়া দরকার। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে নির্বিঘ্ন প্রবেশের বিষয়গুলোও তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে বলে ফোনকলে বলেন ট্রুডো।
জাস্টিন ট্রুডো ও সু চি প্রত্যেক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ মিয়ানমারে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সমাজ গড়তে সহায়তা করতে প্রস্তুত, যেহেতু মিয়ানমার প্রত্যেক নৃগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অন্যদিকে ফোনে আলাপকালে অং সান সু চিও মানবিক সহায়তায় কানাডার ভূমিকার প্রশংসা করেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।