একাদশ জাতীয় নির্বাচনে একদিকে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবিকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: ‘বিএনপি’র নির্বাচনী প্লাটফর্ম ঐক্যফ্রন্টের পুরো নির্বাচনী প্রচারণা ছিলো প্রতিহিংসামূলক।তারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের প্রতি কী ধরণের নৃশংসতা চালাবে তার ফিরিস্তি ছিল পুরো প্রচারণা জুড়ে। জনগণের জন্য কিছু ছিল না।
অন্যদিকে আমরা আমাদের সাফল্য নিয়ে জনগণের কাছে গিয়েছি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। সমাজের সর্বস্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। ভিক্ষুকের দেশের দুর্নাম ঘুচেছে। যারা মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে মানুষ তাদের মর্যাদা দেবে এটাই তো স্বাভাবিক।
একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারীত প্রশ্নত্তোর পর্বে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন: বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণা দেখে আমার কখনই মনে হয়নি তাদের নির্বাচন করার কোন ধরণের প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল।
তার এমন দাবির প্রেক্ষিতে যুক্তি তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন: আমাদের যারা প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল তাদের কোন নির্বাচনী প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে আমার মনে হয় না। তার ওপর তারা ১ আসনে তিন-চারজন কিংবা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল।মনোনয়ন বাণিজ্য করতে গিয়ে তারা দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এমনকি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা ছিল।
বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী কৌশলে ব্যর্থতা:
বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী কৌশলের ব্যর্থতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন: নিজেরা জনগণের জন্য কি করবে তা তুলে ধরতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল। অপরদিকে ক্ষমতায় গেলে আমাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেবে তাদের প্রচারণায় সেটাই প্রাধান্য পেয়েছিলো। ২০১৩ থেকে ১৫ পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস দেশের মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। এরওপর প্রশাসন, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ। ক্ষমতায় গেলে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা এবং চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি সকলের মনে ভীতি সঞ্চার করে। দুর্নীতি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতৃত্ব খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়াকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে এসময় মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কৌশলের আরও দুর্বলতা তুলে ধরে তিনি বলেন: সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো ছাড়া নিজেদের নিজেদের সাফল্য গাঁথা তুলে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। আর ধরবেই বা কোথা থেকে! তাদের তো সাফল্য বলতে কিছু নেই। নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি জামায়াত এবং তাদের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিভিন্ন আজগুবি প্রতিশ্রুতি যেমন, ‘যেকোন বয়সে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ’, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সর্বোপরি বিএনপির ধানের শীষের প্রতীকে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণরা আর যাই হোক স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না। এসব কারণে ভোটারগণ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। আর সে কারণেই আমাদের এ বিশাল বিজয় অর্জন। এ বিজয়কে আমি দেশের মানুষের বিজয়ী বলে মনে করি।
আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ:
আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে আসীন দাবি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন: ভিক্ষুকের দেশের দুর্নাম ঘুচিয়ে যারা মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে, তাদের মানুষ মর্যাদা দেবে এটাই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। নির্বাচন যতো এগিয়েছে প্রতি সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। নির্বাচনে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করেছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল:
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন: সরাসরি সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ’র পাশাপাশি ইলেকট্রনিক-প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছি। বিএনপি জামায়াত এবং তাদের দোসরদের সকল নেতিবাচক প্রচারণার বিপরীতে ডিজিটাল মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষণিক ইতিবাচক প্রচার চালিয়েছি।
আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার:
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো দাবি করে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ এ সংগঠনিক এ নেতা বলেন: নির্বাচনী প্রচারকালে বাংলাদেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ব্যবসায়ী-চিকিৎসক-প্রকৌশলী-শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-ধর্মীয় নেতা এবং অবসরপ্রাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ সকলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যখন কোন দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তখন তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। আমাদের বেলায় তাই হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে তার দলের নির্বাচনী কৌশল। এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: নির্বাচনে জয় লাভের জন্য আমরা জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য অনুসরণের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার’১৮ প্রণয়ন করি। যার অন্যতম স্লোগান ছিল ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’।
দাবি করেন: এদেশের মানুষ আমাদের ইশতেহার এর পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় প্রদান করেছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো পক্ষ এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে জনগণকে বুঝিয়ে পক্ষে নেওয়ার প্রতিযোগিতা। প্রতিপক্ষ জোরালো হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা জোরালো হয়। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষের কোন নির্বাচনী কৌশল বা প্রস্তুতি ছিলো বলে আমার মনে হয়নি।
আওয়ামী লীগের জয়ের পূর্বাভাস আগেই ছিলো:
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের পূর্বাভাস আগ থেকেই ছিলো এমন তথ্য সংসদের সামনে তুলে ধরে নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক জোট মহাজোট নেতা বলেন: একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে।এ বিজয় ছিল প্রত্যাশিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপে এমন থেকে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইকোনমিক্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র জরিপের ফল তুলে ধরে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ এ ব্যক্তি বলেন: আপনারা লক্ষ্য করেছেন আমাদের এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের বহুবিধ কারণ রয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। এর মধ্যে কয়েকটি সংসদের সামনে তুলে ধরছি। বিগত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে দেশের মানুষ তার সুফল পেয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। যে বয়স্ক মানুষ গুলো সংসারে ছিল অপাংক্তেয়, বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ভাতা তাদেরকে সংসারের জায়গা করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের উন্নয়ন:
আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরের উন্নয়ন চিত্র আরও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন: নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্রাম বাংলার প্রায় সকল পরিবার আওয়ামী লীগ সরকার এর নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এসেছে। এসব পরিবার কোন না কোন ভাবে উপকৃত হচ্ছে। শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ১০ বছর পূর্বে একজন কৃষি শ্রমিক তার দৈনিক মজুরি দিয়ে ৩ কেজি চাল কিনতে পারতেন। এখন সেই একদিনের পারিশ্রমিকে তিনি ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন।
আওয়ামী লীগের দু’মেয়াদে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা:
আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে সমাজের সকল স্তরের মানুষ আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছে দাবি করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বলেন: সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা গত ১০ বছরে তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি বেসরকারি খাতে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন ভাতা কয়েকগুণ বেড়েছে। কৃষকদের কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
উন্নয়ন গ্রহণ করেছে জনগণ:
পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্প গুলো দৃশ্যমান হওয়ায় দেশের মানুষের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা বেড়েছে।এসময়ে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে বসিয়েছি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়া দেশের জনগণ গর্বিত হয়েছে।