‘টুর্নামেন্টের আগে অনেকেই বলেছেন ল্যাপিং করে আসা ডিফেন্ডার ফরোয়ার্ড হয় কীভাবে? আজ দেখিয়ে দিলাম আমিও পারি।’শামসুন্নাহারের এমন কথায় সংবাদ সম্মেলনে হাসির ঢেউ উঠলো একচোট। উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধে আরও একবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে হল শামসুন্নাহারকে। মুখে লাজুক হাসি। চোখে নিখাদ গর্ব। যার একমাত্র গোলে ভারতকে হারিয়ে নারীদের প্রথম সাফ শিরোপা উঠেছে বাংলাদেশের ঘরে, গর্ব করাতো তাকেই মানায়।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের আগে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে বসলেন, রক্ষণ থেকে উঠিয়ে শামসুন্নাহারকে খেলানো হবে আক্রমণভাগে।
ছোটন রতন চিনতে ভুল করেননি। তার সিদ্ধান্তে যে বিন্দুমাত্র ভুল ছিল না তার প্রমাণ শামসুন্নাহার দিয়েছেন মাঠের খেলাতেই। ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে গোল। বারবার ত্রাস ছড়িয়েছেন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে। আরেক ডিফেন্ডার নিলুফার ইয়াসমিন নীলার সঙ্গে কী দারুণ বোঝাপড়া! শামসুন্নাহার যখন বল পায়ে উপরে উঠেছেন, পেছন পেছন তাকে ঠিক সমর্থন যুগিয়েছেন নীলা। ছোটনের ভাষায়, ‘দুজন মানিক-জোড়!’
গোল করার ক্ষমতা ছিপছিপে লম্বা-গড়নের শামসুন্নাহারের অস্থিমজ্জায়। সদ্য শেষ হওয়া সাফে দুই গোল ছাড়াও চলতি বছরের থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে আছে এক গোল। ঢাকায় হয়ে যাওয়া একই টুর্নামেন্টের বাছাই পর্বে করেছিলেন দুই গোল। গত বছর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপেও আছে দুই গোল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বয়সেই সাত গোল হয়ে গেল শামসুন্নাহারের।
প্রথম দেখায় ছোটনের নজর কেড়েছিলেন। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পরও কোচের কণ্ঠে মিশে থাকলো প্রিয় শিষ্যর প্রতি মুগ্ধতা, ‘শামসুন্নাহার একজন প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা। প্রথম দেখায় বুঝেছিলাম ওকে দিয়ে হবে। নীলার সঙ্গে বোঝাপড়ায় ও বারবার উপরে উঠে গেছে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন আসলে আমার দলের সবাই ওর মতনই গোলের জন্য মরিয়া ছিল।’
কথাটি সত্যি। পুরো টুর্নামেন্টে শুধু ফরোয়ার্ডদের উপরেই নির্ভরশীল থাকেনি বাংলাদেশ। দলের প্রয়োজনে ঠিকই হাল ধরেছেন কেউ না কেউ। ভুটান ম্যাচের বিপক্ষেই যেমন আঁখি খাতুনের জোড়া গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। একজন ডিফেন্ডার হয়েও তাই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফিটা উঠেছে বিকেএসপিএর এই ছাত্রীর হাতে।
মেয়েদের বিভাগের প্রতিটি দলই যেন একটি পরিবার। হাল ধরার মতো খেলোয়াড় বয়সভিত্তিক প্রতিটি দলেই কেউ না কেউ থাকছেন। সেজন্যই কোচ সাহস পাচ্ছেন ২০২০ সালের মধ্যে নারীদের মূল পর্যায়ে সাফ শিরোপা জয়ের। আর যে দলে শামসুন্নাহার-আঁখিদের মতো খেলোয়াড়রা থাকবেন, সে দলকে নিয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন তো দেখতেই পারেন একজন কোচ!