ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন থ্রি’র শুটিংয়ে পুরো টিম গিয়েছিল নোয়াখালীতে। পাঁচদিন শুটিং শেষে সোমবার রাতে ঢাকায় ফিরেছেন পরিচালক কাজল আরেফিন অমি, অভিনেতা মারজুক রাসেল, চাষি আলম, মিশু সাব্বির, জিয়াউল হক পলাশ, ফারিয়া শাহরিনসহ ষাট জনের ইউনিট।
পরিচালক অমির ভাষায়, ঢাকার বাইরে এ লটটির মাধ্যমে ‘অ্যামিউজিং এক্সপেরিয়েন্স’ হয়েছে। চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে নির্মাতা তার বয়ানে শুটিংয়ের নেপথ্যের গল্প শোনালেন…
এই কটা দিন শুটিংয়ে বিশাল চাপ গেছে। এতো চাপ আমার কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে ফিল করিনি। এর আগে ভোলাতে ‘মিশন বরিশাল’র শুটিং করতে গিয়ে এমন একটা ভাইব্রেশন পেয়েছিলাম। ওই নাটকে অভিনয় করেছিল তৌসিফ মাহবুব, পলাশ, শামীম হাসান সরকার, সারিকা সাবা ও বিশেষ চরিত্রে সাফা কবির। তবে সেখানেও ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’র তিনজনকে কানেক্ট করেই মানুষ ভিড় করেছিল। এবার নোয়াখালীতে শুটিংয়ে যাওয়ার আগে ফেসবুক বা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলাম। সেজন্য ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ টিম দেখার জন্য নোয়াখালীর মানুষ প্রস্তুত ছিল।
শুটিংয়ে ৩ ডিসেম্বর থেকে আমরা যে বাড়িতে ছিলাম তার সামনে বিশাল বড় বাগান তারপর মেইন গেট। সেখানে এসে মানুষ ভিড় করতো। ভোড় পাঁচটার দিকেও দেখতাম কম করে হলেও ৪০ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তারা সারারাত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতো। সকাল হতে হতে ভিড় বাড়তে থাকতো। সেখান থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত প্রচুর মানুষ থাকতো। তারপরও কিছু মানুষকে সারারাত গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।


আমরা শুটিং করেছি সোনাইমুড়ির বিভিন্ন লোকেশনে। স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর অন্য উপজেলা থেকে মানুষ আসতো। এগুলো চোখে না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার মতো নয়। শুটিং ছিল, পলাশ ওই এলাকার পলিটিক্যাল পরিবারের ছেলে। ওই অঞ্চলে হাঁকডাক প্রচুর। এজন্য স্থানীয় প্রচুর অ্যারেঞ্জমেন্ট ম্যানেজ করতে হয়েছে। একেবারে ফিল্মের সেটআপে ৬০ জনের ইউনিট নিয়ে শুটিং করতে হয়েছে। পলাশের নিজের এলাকা হওয়ায় সাপোর্ট ভালো পেয়েছি। ব্যাচেলর পয়েন্টের দর্শকদের কাছে পরিচিত নাম বজরা বাজার। সেখানে জাকির চরিত্রের শুটিং করেছি।
একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি। বজরা বাজারে শুটিং চলাকালে দৃশ্যটি এমন ছিল, হাইওয়েতে কাবিলা (পলাশ) জাকিরকে ধাওয়া দিচ্ছে। তখন স্থানীয় যত মানুষ ছিল শুটিং দেখছিল সবাই কাবিলার সঙ্গে ধাওয়া দিয়ে দৃশ্যটিতে অংশ নিয়েছে। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে দৃশ্যটি ধারণ করেছি। পর্বটি প্রচার হলে দর্শক দেখতে পাবেন। সত্যি খুবই মজা হয়েছে। আমি ফিল করি, ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ওয়ান থেকে এ পর্যন্ত যত লটের শুটিং করছি, এটা সবচেয়ে ‘বেস্ট এক্সপেরিয়েন্স’।
আমার চ্যালেঞ্জ ছিল নোয়খালীতে টিমটা নিয়ে যাওয়া। যদি দুটো দৃশ্যের শুটিং করতে পারি তাও ভালো। তবে আমি যাবোই। এই সিরিয়ালটা আমি গত দুবছর ধরে চালাচ্ছি। এটা ইতহাসের পর্যায়ে চলে গেছে, তাই আমি চাই এই ইতিহাসের ফুলস্টপ এমনভাবে হোক যাতে, ১৫-২০ বছর পর মানুষ বলবে, ২০১৮-১৯-২০ সালে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নামে একটি সিরিয়াল ছিল যেখানে কিছু চরিত্র ছিল যা তৈরি করেছিলেন কাজল আরেফিন অমি। আমার চাওয়া, ২০ বছর পরেও মানুষ এ নাটক নিয়ে আলোচনা করুক। সেরা অ্যাফোর্ড দিয়ে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস ২০ বছর পরে মানুষ ব্যাচেলর পয়েন্টের নাম মনে রাখবে।
শুধু আমি নই, প্রত্যেক চরিত্রে যারা অভিনয় করছেন সবার ইমোশন মিশে আছে ব্যাচেলর পয়েন্টের সঙ্গে। চরিত্রগুলো তাদের ‘ডে সেল’ করার জন্য এখানে কাজ করে না। তারাও চরিত্রগুলো লালন করেন। প্রত্যেক চরিত্রই দর্শকদের কাছে জীবন্ত। নোয়াখালীতে শুটিংয়ে গিয়ে এসব চরিত্রগুলো দেখার জন্য, তাদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এসেছে। দিনশেষে কাজ করতে গিয়েছি। ঢাকায় ফেরার আগে প্রায় তিনঘণ্টা একটা রুমে আটকে ছিলাম। দুই হাজার স্কয়ার ফিটের যে ফ্ল্যাটে আমরা ছিলাম তার মেইন গেট ভেঙে দেয়াল টপকে আমার ফ্ল্যাটের সামনে মানুষ চলে এসেছে।
বাড়িটার সামনে বড় বাগান। সেই বাগানের গাছ ভেঙে মানুষ আমাদের দেখার চেষ্টা করেছে। বাড়ির মালিকের কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকার বাগান নষ্ট হয়েছে। উৎসুক মানুষ ছিল রিয়েলি ক্রেজি। লোকাল ওসি, দারোগা ও এমপি মানুষজন তাদের সহযোগিতা পেয়েছি। পুলিশের সাহায্য নিয়ে ঢাকা ফেরার আগে রুম থেকে বেরিয়েছি। দর্শকদের চাপ শুটিংয়ে বিরক্ত লাগে। কিন্তু মানুষ এতো ভালোবাসা দিয়েছে যে যতদিন বেঁচে থাকবো মনে থাকবে। পুরো নোয়াখালীবাসির কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনুলিখন: নাহিয়ান ইমন