
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় একটু ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে অনলাইন ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ব্যাংকিং খাত বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সেবরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আগে কী অবস্থায় ছিল সেটা আপনারা দেখেছেন। কিন্তু এ বছর বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ব্যালেন্সশিট ভাল। প্রফিট না থাকলে তো ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। আগে সবাই বলতো, ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড দেয় না। নানাভাবে তারা ডিভিডেন্ড এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন ব্যাংকিং খাত একটি ভাল অবস্থানে আসছে। আগে সরকারি ব্যাংকগুলো সরকার থেকে টাকা নিয়ে পুনঃঅর্থায়ন করে চলতো। গত দুই-তিন বছর থেকে এই কাজটি আর নেই, পরিবর্তন হয়েছে। এখন পুনঃঅর্থায়ন করার কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে নিজেদের অর্থ অর্জন করতে হবে। আয় করতে হবে, আয় করে ব্যয় করতে হবে। সেটি তারা করে যাচ্ছে। সুতরাং সরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক সবাই একটু ভাল অবস্থানে আছে।

আমানত ও ঋণের সুদহার বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, সারা বিশ্বের বিবেচনায় ব্যাংকে সুদহার ৬ ও ৯ শতাংশ করা হয়েছিল। কারণ আমরা কোনো না কোনো ভাবে কোনো দেশের সাথে সম্পৃক্ত। এখন সেসব দেশে যারা ব্যবসা করে সেখানে সুদহার অনেক কম, বিদেশে সুদহার অনেক কম। সুতরাং কম সুদ নিয়ে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যদি ব্যবসা করতে পারে, তাদের উৎপাদন ব্যয় কম হবে। পরিচালন ব্যয় আমাদের চেয়ে কম হবে। ফলে প্রতিযোগিতায় তারা আমাদের চেয়ে বেশি টিকবে।
সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সুদহার ছিল আমাদের দেশে। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে এটি বলেছেন। ব্যাংকগুলোর যে অ্যাপ্রিহেনশন ছিল ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে, আর্থিক অবস্থা ভালো থাকবে না, তাদের আয় কমে যাবে, ব্যয় বেড়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো বাস্তবে হবে না। ২০-২২ শতাংশ সুদ দিয়ে কী হবে যদি আপনি না পান। এখানে রাইটাপের পরিমাণ কম।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের মতো ইনফ্লেশন রেট খুব কম দেশে পাওয়া যাবে। বিশ্বের কোথাও কোনো ব্যাংকে টাকা রাখলে সুদ পাওয়া যায় না বরং টাকা রাখলে ইন্টারেস্ট দিতে হয়। এজন্য এটা আমাদের দেশের লোকজন যারা বিদেশে আছেন তারা অফিশিয়াল ব্যবসা করলে বিদেশে টাকা রেখে কিছু পান না। তাদের টাকাও এখন দেশে নিয়ে আসেন। দেশে টাকা এনে বিনিয়োগ করে তারা লাভবান হতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি উৎপাদনে নেই তাদের দামও অনেক বেশি উপরে উঠে যাচ্ছে। বাজার এখন বেশ ভাল উচ্চতায় পৌঁছেছে- বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন বিষয়টি দেখবেন। পুঁজিবাজারের যে বেসিক বিষয় সেটি হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। দেশের অর্থনীতি যখন ভাল হবে, পুঁজিবাজারের অবস্থাও চাঙ্গা থাকবে। তবে যে অসঙ্গতিগুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, সেই বিষয়ে সেগুলো এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানাবো।
আজকের সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (২য় পর্যায়) প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের কাছ থেকে ২০৪ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকায় এ প্রকল্পের সরঞ্জাম কিনবে। প্রকল্পের আওতায় (তিন পার্বত্য জেলার জন্য) ১০০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম ও ৩২০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুই হাজার ৫০০ সোলার কমিউনিটি সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিনটি জেলার দুর্গম এলাকায় সোলার সিস্টেমগুলো দেয়া হবে। এটা গ্রাহকদের বিনামূল্যেই দেয়া হবে।
এছাড়া সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (সাবিক) কাছ থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার ১১৯ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার ৭৬০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতি টন সারের দাম পড়েছে ৪৭০ দশমিক ১৬ ডলার।
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
১১১ কোটি ১১ লাখ ৪৬ হাজার টাকায় এ সার কিনছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। প্রতি টনের মূল্য পড়ছে ৪৩১ ডলার।
বিজ্ঞাপন