যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া মানবিকতার চরম বিপর্যয়ের এক উদাহরণ। আরব বসন্তের হাওয়ায় শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘাত ইতিমধ্যেই ৫ বছরে অতিক্রম করেছে। সরকারি ও বিদ্রোহী বাহিনীর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিপর্যস্ত ৭১ হাজার ৪৯৮ বর্গমাইলের দেশটি এখন বিভিন্ন গ্রুপের দখলে।
বহু জাতিসত্তার আবাসস্থল পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে কোন জায়গায় কারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে তা তুলে ধরেছে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। ৫ বছর যুদ্ধের পর এখন সুন্নি প্রধান দেশটির কোন অংশ কার দখলে তা নিয়ে একটি ম্যাপ তৈরি করেছে তারা।
সিরিয়ার পশ্চিমে লেবানন, উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে জর্দান এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ইসরায়েল। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই দেশটিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরও রাজধানী দামাস্কাসের আশেপাশের এলাকায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সংঘাত চলছে। রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি সিরিয়া সরকার এবং বিরোধীদের আলোচনায় বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার জন্য কাজাখাস্তানের রাজধানী আস্তানায় ২৩ জানুয়ারিতে এই বৈঠক হবে বলে জানায় রাশিয়া। তবে আইএসআইএল বা জঙ্গি গোষ্ঠি আল-কায়েদার শাখা জাভাত ফাতেহ আল-শাম এই চুক্তির অন্তর্গত না হলেও দেশের বৃহত্তর অংশে কিছুটা হলেও ধ্বংসযজ্ঞ কমেছে।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
‘অন্তহীন’ যুদ্ধের বিভিষিকায় বিধ্বস্ত সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত অনেক প্রাণ গেছে, লাখ লাখ লোক জীবন বাঁচানোর আশায় দেশ ছেড়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোন আভাস না থাকায় বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংঘাত চলছেই। সিরিয়ার সরকার, ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল), কুর্দি বাহিনী এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপ দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশে এখনও যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
তবে প্রবল বিরোধের মুখে জঙ্গিগোষ্ঠি আইএসআইএল ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিগত কয়েক মাসে রাশিয়ান যুদ্ধ বিমানের সহযোগিতায় সরকারি বাহীনি বেশ কিছু স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়, আইএসআইএলকে ঐতিহাসিক পালমিরাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে নির্মুল করতে সক্ষম হয়েছে তারা। সংঘাতের অন্যতম প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র আলেপ্পোতেও ২০১৬ সালের শেষে দখলে নিয়েছে সরকারি বাহিনী।
এছাড়াও আইএসআইএল’এর হাত থেকে সিরিয়ার উত্তরাংশের বেশ কিছু জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে কুর্দি যোদ্ধারা। এছাড়াও জঙ্গি দল আইএসআইএলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্প্রতি তুর্কি বাহিনীও যোগ দিয়েছে, যার ফলে জারাব্লাস শহর থেকে তারা জঙ্গিদলটিকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
আইএসআইএল শুধু সিরিয়াতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে না, বরং ইরাকেও তাদের দখল ক্রমেই কমে আসছে। যেখানে কুর্দি বাহিনী ও ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী আইএসআইএলের শেষ শক্ত ঘাটি দেশটির উত্তরাংশের শহর মসুলের দিকে অগ্রসরমান।
২০১১ সালের মার্চে সরকারি বিরোধী বিদ্রোহ থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়াও লাখ লাখ সিরিয়ান দেশ ছেড়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।