যাদের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের পর সেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের পরিবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় রাষ্ট্রের দেওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁই থেকেও অনেককে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে অন্যতম সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ। তিনি ১৯৫০ সালের দিকে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত গাইতেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটিতে তিনিই সুর দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজধানীর ১ নং মালিবাগ এলাকায় আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে বাড়ি বরাদ্দ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর পাল্টে যায় চিত্রপট। অনেক শহীদ পরিবারের মতো আলতাফ মাহমুদের পরিবারের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
মালিবাগের ওই বাসা থেকে যখন শহীদ আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছিল, তখন একটি গাছের নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো আলতাফ মাহমুদের একমাত্র স্কুলপড়ুয়া মেয়ে শাওন মাহমুদকে।
মালিবাগ থেকে উচ্ছেদের পর জাকির হোসেন রোডে আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে একটি বাসায় থাকতে দেয়া হলেও পরবর্তিতে সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর আর কোন সরকারই আলতাফ মাহমুদের পরিবারের জন্য কোন জায়গা বা বাসা বরাদ্দ দেয়নি।
এমনকি আলতাফ মাহমুদকে গণশহীদ আখ্যা দিয়ে কোন মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটও দেয়া হয়নি। আলতাফ মাহমুদের সুর করা অমর একুশের সুর এখন বিশ্বময়, অমর একুশেও পেয়েছে আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা। তবে আলতাফ মাহমুদের পরিবারের জন্য কিছু করার দায়িত্ব কোন সরকারই নেয়নি।
১৯৭১ সালে আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তার বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের খবর ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী তাকেসহ অনেক গেরিলাকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর আর ফিরে আসেননি আলতাফ মাহমুদ।
পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার দেশাত্মবোধক গান মুক্তিযোদ্ধাদের অণুপ্রাণিত করে।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিও রিপোর্টে: