মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে লাখো রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার চার বছর হয়ে গেল। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেসামাল অবস্থা ও বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে আছে।
চলতি বছরের শুরুতে চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখা গেলেও ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তা থমকে যায়।
নিয়ম রক্ষার আলোচনার মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকা আর তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে বিরোধের মধ্যে ঝুলে আছে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চাপ দিচ্ছে তাদের স্থায়ীভাবে রেখে দেয়া নয়তো তাদের কর্মের সুযোগ করে দিতে। সবমিলিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় এইসব রোহিঙ্গাদের জীবন।
রোহিঙ্গাদের একজনকেও গত চার বছরে তাদের দেশে ফেরাতে না পারার হতাশার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত জনগণ, আমরা মানবিক কারণে তাদেরকে এখানে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে তারা ফিরে যাবে। মিয়ানমারও বলেছে, তাদেরকে নিয়ে যাবে। চার বছর হল যায় নাই, তারা কিন্তু কখনও বলে নাই, নেবে না। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে তাদের ফেরত পাঠানো।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে বোঝা যায়, মিয়ানমার কৌশলে প্রত্যাবাসন ইস্যুকে এড়িয়ে যাচ্ছে, সমক্ষেপণ করছে। বিষয়টি খুবই চিন্তার।
কক্সবাজারের টেকনাফসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা যেসব জায়গায় অবস্থান করছে, সেসব জায়গা একসময় ছিল গহীণ বন ও হাতিসহ নানা পশুর অভয়ারণ্য। পরিবশে ধ্বংস করে সেইসব জায়গা এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে। বনভিত্তিক জীবন-জীবিকা হারিয়ে স্থানীয় বহু জনগণ কর্মহীন ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাদক, খুন-রাহাজানি ও নানা অপরাধের কেন্দ্র হয়ে উঠছে একসময়ের শান্তিপূর্ণ ওইসব এলাকা।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা চাইছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা ও দেশ তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। প্রথম দিকে অবরোধ জারি করার মতো সতর্কতার নানা বক্তব্য আসলেও বর্তমানে ভূ-রাজনীতি ও আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে চীন-ভারতসহ সবাই চুপ। বিষয়টি নিয়ে সরকারসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কূটনৈতিক তৎপরতা জারি রাখা উচিত, যাতে করে রোহিঙ্গারা যথাসম্ভব দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে।